মহামারী করোনার মধ্যেই প্রকৃতির রুদ্র আচরণ

যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু পানি আর পানি তার রয়েছে মুষলধারে বৃষ্টির হানা। চারদিকে বন্যার ঘোলা পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, উঠানেও আশ্রয় নেওয়ার জায়গা নেই। জীবন বাঁচাতে সড়ক কিংবা বাঁধই যখন শেষ আশ্রয়স্থল। ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে এলোমেলো বাতাস আরো দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বানভাসীদের। বাতাসের তোরে বৃষ্টির পানি ঘরে প্রবেশ করে ভিজিয়ে দিচ্ছে আসবাবপত্র। গত দুদিনের টানা ভারী বর্ষণে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষের অবস্থা এখন এমনই দুর্বিসহ। বানের পানিতে বাড়িঘর ছাড়া এসব মানুষ খাবার জোগাড় আর আশ্রয় খুঁজতেই নাজেহাল।

টানা দু’দফা বন্যা আর নদীর তীব্র ভাঙনে চরাঞ্চলসহ অববাহিকার হাজারো মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানির স্রোতে অনেকের বাড়িঘর ভেসে যাওয়ায় একেবারে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক পরিবার। বন্যার পানির তীব্র স্রোতে নদীর গতিপথ বদলে গিয়ে ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর। এতে গৃহহীন হয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। করোনার মহামারিতে কর্মহীন মানুষগুলোর সাথে প্রকৃতির এমন রুদ্র আচরণে নতুন সংকট তৈরি করেছে খাদ্যভাব।

এদিকে, সোমবার (২০ জুলাই) দুপুরে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৮ ইউনিয়নের অন্তত ১১ হাজার পরিবারের ৪৬ হাজার মানুষ। বন্যার পানি থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু এলাকায় অবস্থান নিয়েছে বানভাসীরা।

উপজেলার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ। নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি উঁচু এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। প্রমত্ত তিস্তার পানি আবারো বাড়তে থাকায় চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বেলকা, হরিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, চন্ডিপুর, তারাপুর, শান্তিরাম ও কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়নের ১১ হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে কাঁচাপাকা বাড়িঘর ও ফসলি জমি।

বন্যার্তদের সরকারিভাবে উদ্ধারের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই পরিবার-পরিজন, গবাদি পশু-পাখি নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ও উঁচু স্থানসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। এতে গবাদিপশু গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে বানভাসিরা। বৃষ্টিতে জ্বালানি ভিজে যাওয়ায় রান্না করতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসিদের জন্য সরকারি ত্রাণ সহায়তা অপ্রতুল হওয়ায় তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বানভাসীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, জ্বালানি কাঠ ও গো-খাদ্যের সংকট থাকায় চরম বেকায়দায় পড়েছে এসব পরিবার।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ১১ হাজার ৮৩০ পরিবারের ৪৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে তারাপুর ইউনিয়নে ৪০০, বেলকায় দুই হাজার, হরিপুরে ৩ হাজার ৩০০, কঞ্চিবাড়ীতে ৬০০, শ্রীপুরে ৪৫০, চন্ডিপুরে ৫৭০ ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে ৩ হাজার ৭০০ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। তবে সরকারি হিসাবের চেয়ে প্রকৃত পানিবন্দির মানুষের সংখ্যা আরো বেশি। তাদের অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। খাদ্য সঙ্কটে দিশেহারা পরিবারগুলো ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, তিস্তার পানি কিছুটা কমেছে। তবে ভারী বর্ষণের কারণে আবারো নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী লুতফুল হাসান বলেন, এ পর্যন্ত ৯৫ মেট্রিকটন জিআর চাল ও নগদ ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫০ হাজার টাকার গো-খাদ্য ও এক লাখ টাকার শিশু খাদ্য বিতরণ করেছি। বন্যার্তদের জন্য আরো বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। চিঠি এলেই বরাদ্দ বণ্টন করা হবে।