‘পোশাকের উপর দিয়ে মেয়েদের গায়ে হাত দিলে তা যৌন হেনস্থা নয়’ : মুম্বাই হাইকোর্ট

‘যৌন উদ্দেশ্যে ত্বকের সঙ্গে ত্বকের সংস্পর্শ’ কেই যৌন নির্যাতন হিসেবে গণ্য করা হবে বলে রায় দিয়েছে মুম্বাই হাইকোর্ট। ভারতের পাকসো আইনের এ রায় ঘোষণার পর প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে গোটা বলিউডে। তাপসী পান্নু, আলিয়া ভাটের মা সোনি রাজদান সহ আরো অনেকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য ২০১৬ সালে এক শিশুর যৌন হেনস্থার মামলায় ‘পোশাকের উপর দিয়ে শরীরের অঙ্গ স্পর্শ করলে তা যৌন নির্যাতন হিসাবে গণ্য হবে না’ বলে মুম্বাই হাইকোর্ট রায় দেয়। তাতে বলা হয়, যেহেতু শিশুটির জামাকাপড়ের ভেতর হাত গলিয়ে তার শরীরের কোথাও স্পর্শ করা হয়নি, তাই এটিকে যৌন নির্যাতন বলা যাবে না। মুম্বাই হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের মহিলা বিচারপতি পুষ্প গানেদিওয়ালা গত রোববার এ রায় ঘোষণা করেন।

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, শিশুকে পেয়ারার লোভ দেখিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি ঘরে নিয়ে গিয়ে শিশুকন্যাটির বুকে হাত দেয়। ৩৯ বছরের ওই অভিযুক্তকে পাকসো আইনের ৮ নম্বর ধারায় ৩ বছরের সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত। পরে হাইকোর্টে আপীল করেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। ফলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ এবং ৩৪২ নম্বর ধারা অনুযায়ী নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্তের সাজার মেয়াদ কমে দাঁড়ায় ১ বছর।

তাপসী পান্নু এক টুইটে লিখেছেন, ‘অনেকক্ষণ ধরেই ভাবছি। তবে এই খবরটা পড়ে যা মনে হচ্ছে, তা প্রকাশের শব্দ এখনো খুঁজে পাইনি।’ এরপরই ‘ন্যাশনাল গার্লস ডে’র শুভেচ্ছা জানিয়ে আরেকটি টুইট করেন তিনি। এ রায় ভারতীয় সমাজে কিশোরীদের স্বত্ত্বাকে নীচে নামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তাকে কটাক্ষ করেই তিনি টুইটটি করেন।

বলিউড অভিনেতা রিতেশ দেশমুখ টুইট করে লিখেছেন, ‘কেউ আমায় দয়া করে বলুন এটা ভুয়ো খবর।’ সামাজিক মাধ্যমে নিজের ক্ষোভ জাহির করেছেন অভিনেত্রী শিবানী দান্ডেকরও।

গত বছর মেয়ের বাবা হয়েছেন অভিনেতা অঙ্গদ বেদী। বিস্ময়ের সুরে নেহা ধুপিয়ার স্বামী টুইটারে লিখেছেন, ‘এটা কি সত্যি? নাকি?’

সংগীত শিল্পী চিন্ময়ী শ্রীপদা টুইটারে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। লেখেন- ‘এটাই সেই আইন যার মুখোমুখি হই আমরা মেয়েরা। দারুণ তাই না? এই দেশটা হেনস্থাকারীদের জন্যই।’

আলিয়া ভাটের মা সোনি রাজদান টুইট করেন, ‘কী সাংঘাতিক… এটা তো প্রত্যেক হেনস্থাকারীর জন্য রাস্তা খুলে দেওয়া… বিস্মিত বললেও কম বলা হবে। হতবাক… এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’

রঘু রাম টুইট করেন, ‘এই দিনটা হেনস্থাকারীদের জাতীয় দিবস হিসাবে চিহ্নিত করা উচিত।’

জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন এ রায়ের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি আবেদন জানানোর অনুরোধ করেছে মহারাষ্ট্র সরকারকে।