খোঁজ মিলেছে তিন ডোজ টিকা নেওয়ার দাবি করা সেই যুবকের

একবার ওদিকে গেলাম একজন টিকা দিল। তারপর এদিকে গেলাম আরেক টিকা, এরপর একজন বলল এবার ওইদিকে যান পরে আরেক টিকা। এভাবে তিন টিকা নেয়ার পর বাইরে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম আপনাকে কতগুলা টিকা দিছে, উনি বলল একটা। কিন্তু আমাকে তো তিনটি টিকা দিল…

বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে টিকা দেয়ার পর এভাবেই সাক্ষাৎকার দেন ওমর ফারুক নামে এক প্রবাসী, তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জালকুড়িতে। এরকম সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর ওমর ফারুককে কে বা কারা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার খোঁজ মিলেছে। বর্তমানে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

গত মঙ্গলবার ওমর ফারুক বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান, বিএসএমএমইউ টিকাদান কেন্দ্রের তিনটি বুথ থেকে তাকে তিনবার টিকা দেয়া হয়েছে। এরপর ওই ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর আসে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একই দিনে তিন ডোজ টিকা দেয়ার যে খবর রটেছে তা ঠিক নয় বলে দাবি করেছে। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১২টায় ফতুল্লার ভুইগড় এলাকায় যান গণমাধ্যম কর্মীরা, অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওমর ফারুকের বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়।

ওমর ফারুকের বাড়িতে গিয়ে এলাকাবাসীর ভিড় দেখা যায়। তার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বজন ও এলাকাবাসী শুরুতে কথা বলতে রাজি হননি। ওমর ফারুকের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেও তারা কিছু জানেন না বলে জানান। তবে একপর্যায়ে তারা স্বীকার করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিমের পরিচয় দিয়ে বাড়ি থেকে ওমর ফারুককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দিনভর নিখোঁজ থাকার পর সন্ধ্যায় ওমর ফারুক তার বাবা ও মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন বলে স্বজনরা জানান।

ওমর ফারুকের বোন ফারজানা আক্তার জানান, ওমর ফোনে বলেছে, সে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে এবং তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এদিকে একসঙ্গে তিন টিকা নেয়ার পর ওমর ফারুকের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তারা জানিয়েছেন, সামান্য জ্বর অনুভব করা ছাড়া তার শরীরে আর কোনো সমস্যা তারা দেখেননি।

ওমর ফারুকের এক প্রতিবেশী জানান, গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার সময় গাড়িতে করে ওমর ফারুককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সময় তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন বলে জানান। তিন ডোজ টিকা নেয়ার কারণে ওমর ফারুককে চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলেও তারা জানান।

ওই প্রতিবেশী আরও জানান, ওমর ফারুকের বাবা জামাল উদ্দিনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি এখন বিএসএমএমইউতে রয়েছেন। ওমর ফারুকের সঙ্গে তার বোনের স্বামী গোলাম সারোয়ার নাহিদও ওই গাড়িতে করে গিয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছার পর টিকিট কাটতে কাউন্টারে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরই সেই গাড়ি দুটি আর খুঁজে পাননি তিনি। এরপর বুধবার সন্ধ্যায় ওমরের বাবা ছুটে যান হাসপাতালে।

স্বজনদের বরাত দিয়ে প্রতিবেশীরা জানান, ওমর ফারুক তার বাবার সঙ্গে রাত ৮টার দিকে কথা বলেছেন। ওমর ফারুক জানিয়েছেন, তাকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়র টিম পরিচয়ে ওমর ফারুককে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার যে দাবি পরিবার করেছে, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, ওমর ফারুককে কেউ তুলে নেয়নি। আমরা নিশ্চিত হয়েছি তিনি হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে আছেন।