রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা: তদন্ত দাবি অ্যামনেস্টির

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার আহবান জানিয়েছে। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনা পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। এই হত্যার ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের সবাইকে তাদের অপরাধের জন্য ন্যায়বিচারের মুখোমুখি করা এখন বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়েছে। আর এ কাজে রোহিঙ্গা শরণার্থী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং ত্রাণকর্মীদেরও অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে তারা।

অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের ক্যাম্পেইনার সাদ হামাদি বলেন, ‘কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে সহিংসতা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে সশস্ত্র মাদক কারবারিরা খুন করছে, জিম্মি করছে। এই ধরনের ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।’

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস নামে একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন ৪৮ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহ। গতকাল বুধবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে কারা এই রোহিঙ্গা নেতাকে খুন করেছে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর এলাকার স্কুলশিক্ষক মুহিবুল্লাহ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় আসেন তিনি। জেনিভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ সীমান্তে নামে রোহিঙ্গাদের ঢল। সব মিলিয়ে এখন ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে। ২০১৯ সালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের যে সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা উঠেছিল, তার উদ্যোক্তা ছিলেন মুহিবুল্লাহ।

রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও ও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে মুহিবুল্লাহর সম্পর্কও স্থানীয়দের মধ্যে আলোচিত ছিল। ইংরেজি জানার সুবাদে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনা চালাতেন।

মুহিবুল্লাহকে হত্যার খবর শুনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ‘গভীর শোকাহত’ হয়েছেন বলে তার মুখপাত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে। মুখপাত্র বলেন, ‘শরণার্থী শিবিরে যে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকে, সেজন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি।’

আর হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক মীনাক্ষ্মী গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা অধিকারের কথা বলে, সহিসংতার বিরুদ্ধে কথা বলে, মুহিবুল্লাহর মৃত্যু তাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা।’

সংবাদ সূত্রঃ রয়টার্স