আজ চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র ৫০ তম জন্মদিন

সালমান শাহকে বলা হয় বাংলা চলচ্চিত্র জগতের রাজপুত্র। মৃত্যুর দুই যুগ পর এখনও তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। এখনও দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন টিভি পর্দায় তাঁর অভিনীত ছবি প্রচার হলে। ক্ষণজন্মা এই নায়ক রেখে গেছেন ২৭টি চলচ্চিত্র এবং অগণিত ভক্তকূল। আজ রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সেই অমর নায়কের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৫১ বছরে পা দিতেন অসংখ্য ভক্তের এই স্বপ্নের নায়ক।

১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সালমান শাহ সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম কমরউদ্দিন চৌধুরী এবং মায়ের নাম নীলা চৌধুরী। পরিবারের বড় ছেলে সালমানের জন্মনাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তবে চলচ্চিত্রে তিনি সবার কাছে সালমান শাহ নামেই পরিচিত ছিলেন।

সালমান শাহ খুলনার বয়রা মডেল হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। চিত্রনায়িকা মৌসুমী ওই স্কুলে তার সহপাঠী ছিলেন। পরে ১৯৯৩ সালে একই সঙ্গে দু’জনের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। সালমান-মৌসুমী জুটি বেঁধে অভিনয় করেন সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে। সেই থেকে একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
কোন বিবরণ উপলভ্য নেই।

মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে সালমান শাহ ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত প্রায় সবগুলোই সুপারহিট সিনেমা। সালমান শাহ অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, স্বপ্নের নায়ক, স্বপ্নের ঠিকানা, চাওয়া থেকে পাওয়া, জীবন সংসার, প্রেম প্রিয়াসী, সত্যের মৃত্যু নেই, মায়ের অধিকার, এই ঘর এই সংসার, তোমাকে চাই, আনন্দ অশ্রু, বুকের ভেতর আগুন ইত্যাদি।

সালমান শাহর সঙ্গে চিত্রনায়িকা শাবনূরের জুটি ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা জুটিও বলেন অনেকে। এই জুটির প্রতিটি ছবিই সুপারহিট। তাঁদের পর্দার রসায়ন ছিল নজরকাড়া। আবার বাস্তব জীবনের রসায়ন নিয়েও তুমুল আলোচনা হতো। সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের সে সময়কার সম্পর্ক নিয়ে এখনো কম-বেশি চর্চা হয়।

চলচ্চিত্রে অভিষেকের আগের বছর অর্থাৎ ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট তার খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান শাহ। সামিরা ছিলেন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী। তিনি সালমানের দু’টি চলচ্চিত্রে তার পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবেও কাজ করেন। দাম্পত্য জীবনের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎই সালমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এদিন ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার দেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য থেকে যায়।
কোন বিবরণ উপলভ্য নেই।

এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। এরপর মারা যান সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন। পরে ২০১৬ সালে এর মামলার দায়িত্ব পান অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ।

নায়কের প্রয়াণ দিবসে (৬ সেপ্টেম্বর) মামলার অগ্রগতি বিষয়ে অ্যাডভোকেট ফারুক গণমাধ্যমকে জানান, দেরি হলেও ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা রাখি আমরা। সব ঠিকঠাক থাকলে মামলাটি আগামী ৩০ অক্টোবর শুনানি হবে। তবে করোনার কারণে এর আগের বেশ কয়েকটি নির্ধারিত শুনানির তারিখ পিছিয়েছে বলে জানান তিনি।

ফারুক আহমেদ বলেন, সালমান শাহ মৃত্যুর পর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এই মামলার সঙ্গে ২০১৬ সালে সম্পৃক্ত হই। সর্বশেষ পিবিআই যে রিপোর্টটি দিয়েছে সেটি আমাদের বিপক্ষে যায়। আমরা এর বিপক্ষে নারাজি দাখিল করবো।

তিনি জানান, মামলার শুনানি করতে হলে সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীকেও উপস্থিত থাকতে হবে। ওনাকে আদালতের কাছে স্ট্যাটমেন্ট দিতে হবে। এ কারণে মামলাটির নতুন তারিখ নিতে হয়েছে।

মামলার বিষয়ে অ্যাড. ফারুক আহমেদ আরও বলেন, এই মামলার জন্য আমাদের লেগে থাকতে হবে। অনেক বিচারকই তো আসবেন। কারণ, জুডিশিয়ালি তদন্ত হওয়ার পর র‍্যাব থেকে তদন্তভার পিবিআইতে পাঠানো হয়েছে; যা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। এখন এই মামলা নিম্ন আদালতে আছে। পরপর জজকোর্ট, হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট, ও রিভিউকোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ আছে। কেউ যদি মনে করেন বাবা-মা মারা গেলে মামলা শেষ হয়ে যায়। সেটা ভুল। ক্রিমিনাল মামলা কখনো মরে না।
কোন বিবরণ উপলভ্য নেই।

সালমান ভক্তদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা দোয়া করুন ও ধৈর্য ধরুন। বিচার আমরা পাবো। সত্যের বিচার একসময় হবেই।

গত ৩ নভেম্বর ১৯৯৭ সালে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডি’র প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন।

২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন।

মামলাটি এরপর র‍্যাব তদন্ত করে। তবে র‍্যাবের দ্বারা তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করে। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র‍্যাবকে মামলাটি আর না তদন্ত করার আদেশ দেন। তখন থেকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে আছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সব ঠিকঠাক থাকলে মামলাটি আগামী ৩০ অক্টোবর শুনানি হবে।