মা ইলিশ রক্ষা অভিযান পরিচালনাকারী দলের ওপর জেলেদের হামলা

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীতে চলছে মা ইলিশ নিধনের মহাউৎসব। এমনকি জেলেরা মা ইলিশ রক্ষা অভিযান পরিচালনাকারী দলের ওপর হামলা করেছে। শনিবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের মরিছাকান্দি এলাকায় পদ্মা নদীতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভির আল নাসিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা নদীতে শনিবার দুই দফা অভিযান পরিচালনাকারী দলের ওপর হামলা করে জেলেরা। এতে উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তিনজন মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মি ও দুইজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে মৎস্য বিভাগের কর্মী আব্দুল বারেক মিয়া নিখোঁজ আছেন। এ সময় পুলিশের দুটি আগ্নেয়াস্ত্র হারিয়ে যায়। একটি উদ্ধার করা গেলেও আরেকটি এখনো পাওয়া যায়নি।

সখিপুর থানার উপ-পরিদর্শক মিরাজ হোসেন বলেন, জেলেদের হামলার কারণে মৎস্য বিভাগের কর্মী ও পুলিশ সদস্যদের বহনকারী একটি স্পিডবোট তলিয়ে যায়। তাতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশের কিছু সরঞ্জাম হারিয়ে গেছে। নদী থেকে তা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আমরা হামলার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে আটক করেছি।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, মা ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা এমন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে অভিযান চালান উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মি ও পুলিশ সদস্যরা। তারা একটি স্পিডবোট নিয়ে অভিযানে গেলে মরিছাকান্দি এলাকায় জেলেরা তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় তাদের বহনকারী স্পিডবোট উল্টে নদীতে তলিয়ে যায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশ সদস্য ও মৎস্য বিভাগের কর্মীদের উদ্ধার করে। ওই হামলায় মৎস্য বিভাগের মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন, ওমর আলী, মাঠ ক্ষেত্র সহকারী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দাস এবং সখিপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশ সদস্য মেহেদী হাসান আহত হন।

এদিকে শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, শরীয়তপুর ভেদরগঞ্জে পদ্মা নদী ৪১ কিলোমিটার নদী পথ। দীর্ঘ এ নদীতে আমাদের চোখ ফাঁকি নিত্যনতুন কৌশলে মা ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় নেতাদের আঁতাতেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরছে এবং অভিযান পরিচালনাকারী দলের ওপর হামলা করছে তারা। আমরা আরও কঠোর অভিযান চালাব। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

তিনি আরও জানান, জেলেরা যাতে নদীতে না যায় তার জন্য সরকার শরীয়তপুরের ১৯ হাজার জেলেকে খাদ্যসহায়তা হিসেবে ২০ কেজি করে চাল দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩৮০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণ করে শরীয়তপুরে গত বছর ৫ হাজার ৪০০ মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদন করা হয়েছে। আর এ বছর মৎস্য বিভাগ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ হাজার মেট্রিকটন।