গাজীপুরে কিশোর গ্যাং নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ ও এলাকাবাসী

গোটা দেশে দিন দিন নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে দেশের কিশোর গ্যাং গুলো। এবং গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে কিশোর গ্যাং। এতে উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে গাজীপুরে খুন হয়েছে দুই কিশোর। এদের একজন চা-বিক্রেতা অন্যজন স্কুলছাত্র। এ দু’টি ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশ। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ধারালো অস্ত্র। গ্রেফতার সবাই ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং, গ্যাং সংস্কৃতি, উঠতি বয়সী কিশোরদের মধ্যে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের মারামারি উদ্বেগজনক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে খুন হয়েছে উঠতি বয়সের কিশোর।

গাজীপুর মহানগরের জয়দেবপুর, টঙ্গী, বাসন, গাছা, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর থানা এলাকায় বিদ্যমান রয়েছে কিছু কিশোর গ্যাং গ্রুপ। এসব গ্রুপ তাদের দেওয়া বিভিন্ন নামে পরিচিত।

সাধারণত উঠতি বয়সের কিশোররা এসব গ্যাং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। অভিভাবকের অবহেলা ও পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণে এসব গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এসব কিশোর গ্যাং গ্রুপের মধ্যে ছোট খাটো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। এমনি একটি ঘটনার শিকার গাজীপুর শহরের ১৬ বছর বয়সী ফকির আলমগীরের ছেলে নুরুল ইসলাম ওরফে নুরু। গত ৩ সেপ্টেম্বর ‘তুই’ বলাকে কেন্দ্র করে সমবয়সীদের হাতে প্রাণ দিতে হয় নুরুকে। জেলা শহরের সাহাপাড়ার ‘ভাই-ব্রাদারস’ গ্রুপের বেশ কয়েকজন সদস্য কিশোর নুরুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় গত ১২ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-১ এর সদস্যরা গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের ছয় সদস্যকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দু’টি চাপাতি ও একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।

টঙ্গী ও গাজীপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ বিদ্যমান রয়েছে। এসব গ্রুপ বিভিন্ন নামে পরিচিত। সাধারণত উঠতি বয়সের কিশোররা এসব গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। অভিভাবকের অবহেলা ও পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণে এসব গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এ গ্যাং গ্রুপের মধ্যে ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ও বাগবিতণ্ডা লেগেই থাকে।

এদিকে কিশোররা যেনো কোনো গ্যাং সৃষ্টি করতে না পারে এবং কোনো গ্যাংয়ে যুক্ত হতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারি করছে প্রশাসন।

গত ৭ জুলাই গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন ফকির মার্কেট এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ফিউচার ম্যাপ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শুভ আহাম্মেদকে (১৬) উপর্যপরি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। শুভ ছিল বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। এ ঘটনার পরদিন থানায় মামলা করা হয়। পরে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি ও কিশোর গ্যাং লিডার একই এলাকার মৃদুল হাসান পাপ্পুসহ ‘পাপ্পু লিডার’ গ্রুপের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতার চার সদস্যকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এ ঘটনার কয়েকদিন পর গত ২৪ জুলাই একই থানাধীন কাজীপাড়া চন্দ্রীমা এলাকায় বাসায় ঢুকে তৌফিজুল ইসলাম ওরফে মুন্না (১৫) নামে এক স্কুলশিক্ষার্থীকে খুন করা হয়।

মুন্না রাজধানীর মগবাজারের বিএফ শাহিন একাডেমির অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। এ ঘটনায় পুলিশ মুন্নার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে পারলেও হত্যাকাণ্ডের মূল অপরাধীকে এখনও শনাক্ত করতে পারেনি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর শহর কেন্দ্রিক কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের জড়ো হতে দেখা যায় রাজবাড়ী মাঠ, জোর পুকুরের উত্তর পাড় এলাকায়। অপর দিকে শ্মশান ঘাট, বারেকের টেক, ফুলস্টপ গলিসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের মোড়ে, লোকালয়ে দাঁড়িয়ে ইভটিজিং ও বীরদর্পে সিগারেট টানতে দেখেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলে না। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী হওয়ায় এদের সবার বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে।

এছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উত্তর ছায়াবিথী, দক্ষিণ ছায়াবিথী, বরুদা, জোরপুকুরপাড়, লক্ষ্মীপুরা, দিঘির চালা, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর ও বাইমাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় কিছু কিশোর গ্যাং গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে আধিপত্য, মাদক, নারী, স্ট্যান্ড দখল, সিনিয়র, জুনিয়রসহ নানা ধরনের ছোট খাটো বিষয় নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মারামারি, কোপাকুপির ও খুনের ঘটনাও ঘটছে।

গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষক অসিম বিভাকর বলেন, কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে যুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে ছেলে-মেয়েরা কি করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে সে বিষয়ে অভিভাবকদের নজরদারি করতে হবে।

গাজীপুরের র‌্যাব-১ এর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন  বলেন, আমাদের একটি টিম কিশোর গ্যাং নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া তিনি কিশোরদের পরিবারের সদস্যদের নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, কিশোর গ্যাং রোধ করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কারা কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের লিডার কে বা কারা। পুলিশ এসব খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।