নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের কাছ থেকে আমেরিকার শেখার আছে: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা মন্তব্য করে বলেছেন যে, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের কাছ থেকে আমেরিকার শেখার আছে’। তিনি বলেন, আমেরিকায় নির্বাচন হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন হয়।

সেসব নির্বাচন থেকে আমাদের অনেক শেখার বিষয় আছে। আমরা প্রতিনিয়ত নতুন শিক্ষা নেই। তবে আমেরিকার আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার আছে। কারণ আমরা ইভিএমে (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট নিয়ে চার/পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভোট গণনা করতে পারি এবং ১০ মিনিটেই কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করতে পারি। কিন্তু আমেরিকা সেটি পারে না। এ জিনিস যুক্তরাষ্ট্রে নেই। তাদের এ বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে শেখা দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বিষয়ে আমি সব সময় বলি, এটা দেখতে হবে গ্লোবালি, কাজ করতে হবে লোকালি। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সংস্কৃতি ১৫০ বছরের। তাছাড়া সেখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের চেলে আমরা ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তাদের এতো বছরের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতায় সেটা এখনও পারেনি। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, তাদের কেন্দ্রীয় কোনো নির্বাচন কমিশন নেই।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোট কেন্দ্রে ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

বিএনপি প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে ভোটগ্রহণ চলছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, এ অভিযোগ সঠিক নয়, আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপির একজন সম্মানিত ব্যক্তি আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসবেন। সেই কারণে আমি অফিসে চলে যাই। সকাল সাড়ে ৯টায় এ কেন্দ্রে আমার আসার কথা ছিল। আমি তাদের জন্য ১১টা পর্যন্ত অফিসে বসেছিলাম। কিন্তু কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেননি। এরপরও অফিসে বলে এসেছি, কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে অভিযোগ যেন নেন।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগ সম্পর্কে ওই ব্যক্তি বলেছিলেন, ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এরপর আমি সেখানে খোঁজ নিয়েছি, সেখানকার কর্মকর্তারা বলেছেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আসলে ওই কেন্দ্রে তাদের কোনো এজেন্টই যাননি। সুতরাং তারা যে অভিযোগ করেছেন, তার কোনো সত্যতা নেই।

দেশে দুই স্থানে একাদশ জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে ভোট চলছে। একটি সিরাজগঞ্জে এবং আরও একটি ঢাকা-১৮ আসনে। ঢাকা-১৮ আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। আমি নিজেই আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছি। ইভিএমের মাধ্যমে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিয়েছি। আমি ভোট কেন্দ্রের পিজাইডিং অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি, যোগ করেন সিইসি।

কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও তো বলা যাবে না, একেবারেই তো সকাল। কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতির পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই।

ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোটারের সংখ্যা কম কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কেন হয়, তা বলতে পারব না। তবে এটি সব ক্ষেত্রে সমান নয়। কারণ আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়, সেখানে ৮১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে। এটা কিছু দিন আগের কথা। জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে ভোটারদের আসা কম হয়। কারণ এ নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো প্রভাব থাকে না। এসব কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এর কারণ বলতে পারবেন। আবার ঢাকার চেয়ে মফস্বলে ইভিএমে ভোট ভালো কাস্ট হয়।

ভোটের দিন হিসেবে সাধারণ ছুটি কেন ঘোষণা করা হয়নি এবং বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, কোনো কেন্দ্র দখল করা হয়নি। সাধারণ ছুটি না দেওয়ার কারণ হলো- যাতে ভোটার থাকেন। এর আগে আমরা সাধারণ ছুটি দিয়ে দেখেছি, সামনে দু’দিন ছুটি পেলে ভোটাররা বাড়ি চলে যান। এর জন্য ভোটারদের উপস্থিতি কম হয়। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা এবার সাধারণ ছুটি দেইনি। ভোট দিতে তো সারাদিন লাগে না। তাই যাদের অফিস রয়েছে, তারা যাতে ভোট দিতে যেতে পারেন, সেজন্য ক্যাবিনেট থেকেও নির্দেশনা রয়েছে, ভোটারদের যাতে যেতে দেওয়া হয়।

বিগত ৯ জুলাই সংসদ সদস্য সাহারা খাতুনের মৃত্যু হলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ২৮ সেপ্টেম্বর উপ-নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এ উপ-নির্বাচনে হাবীব হাসান আওয়ামী লীগের এবং এস এম জাহাঙ্গীর বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।