আন্তর্জাতিক রুটে বাড়ছে বাংলাদেশি পতাকার জাহাজ, ৬২টির নিবন্ধন

বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী ৬২টি সমুদ্রগামী জাহাজের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে নৌবাণিজ্য দফতর।

এর মধ্যে সর্বশেষ বাংলাদেশি ‘ফরেন গোয়িং ভ্যাসেল’ বহরে যুক্ত হয়েছে ‘বসুন্ধরা এলপিজি চ্যালেঞ্জার’। এসব তথ্য জানান নৌবাণিজ্য দফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন সংযোজন ‘বসুন্ধরা এলপিজি চ্যালেঞ্জার’। বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেড ৫০ হাজার জিআরটির জাহাজটি কিনেছে। এটি একটি মাইলফলক। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বহরে ইতিমধ্যে ছয়টি নতুন জাহাজ যুক্ত হয়েছে-বাংলার সমৃদ্ধি, বাংলার জয়যাত্রা, বাংলার অগ্রযাত্রা, বাংলার অগ্রদূত, বাংলার অর্জন, বাংলার অগ্রগতি। ৬২টি জাহাজের প্রয়োজনীয় সব তথ্য আমরা ওয়েবসাইটে দিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ বাড়লে আইএমওতে আমাদের মর্যাদা বাড়বে। যে দেশে জাহাজের গ্রস রেজিস্টার টনেজ (জিআরটি) বেশি আইএমওতে ওই দেশের সম্মান বেশি।

প্রিন্সিপাল অফিসার বলেন, সঠিক কাগজপত্রসহ নতুন জাহাজের জন্য আবেদন করলে ৪৮ ঘণ্টায় নিবন্ধন দিচ্ছি আমরা। বিশ্বজুড়ে যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে এসব জাহাজ সে লক্ষ্যে আমাদের ওয়েবসাইটে সব তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে।

আমাদের মেগা প্রকল্প, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য প্রচুর মালামাল আমদানি হচ্ছে। বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ যদি এসব পণ্য পরিবহন করে তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। তাই জাহাজ মালিকরা আগ্রহী হচ্ছে নতুন জাহাজ কিনতে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ নাবিকদের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশি জাহাজ মালিকরা জাহাজ পরিচালনায় বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে ফরেন গোয়িং ভ্যাসেল ক্রমে বাড়ছে।

ফ্লিটে জাহাজ বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে প্রিন্সিপাল অফিসার বলেন, বাংলাদেশ সরকার আইন করেছে ৫ হাজার ডেড ওয়েট টনেজের (ডিডব্লিউটি) বেশি জাহাজ কিনলে এবং জাহাজের বয়স ২২ বছরের কম হলে সরকারকে কোনো ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হবে না। এটাও ফ্লিটে জাহাজ বাড়ার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ায় জাহাজ মালিকরা নতুন জাহাজ কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন।

করোনাকালেও কার্যক্রম বন্ধ হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান কাজটা দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে আসা জাহাজ নিয়ে। করোনাকালেও জাহাজ আসা থামেনি। এ সময় আমদানি-রফতানি কমলেও অব্যাহত ছিল। তাই আমরাও সর্বোচ্চ সেবা দিতে সচেষ্ট ছিলাম। করোনার সময়ও বেশ কয়েকটি জাহাজের নিবন্ধন দিয়েছি, যেগুলো এখন সফল অপারেশনে আছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে আমাদের তিনটি বাতিঘর সার্বক্ষণিক অপারেশনে রয়েছে। এর বাইরে কোরিয়ান সরকারের অর্থায়নে দুবলার চর, কুয়াকাটা, চর কুকরি মুকরি ও নিঝুমদ্বীপে আরও চারটি অত্যাধুনিক বাতিঘর তৈরির কাজ চলছে। আশাকরি আগামী বছর এসব বাতিঘরের কাজ সম্পন্ন হবে।

তিনি বলেন, বাতিঘর পরিচালনা খাতে বন্দরে আসা জাহাজ থেকে ২০১৭-২০২০ পর্যন্ত তিন অর্থবছরে ৬৬ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৪২ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব এসেছে ১৯ কোটি ৬৪ লাখ ৪ হাজার ৩৭৯ টাকা।

নির্বিচারে মৎস্য শিকার চললে বঙ্গোপসাগর একসময় মাছশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা জানিয়ে প্রিন্সিপাল অফিসার বলেন, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ফিশিং ট্রলার যাতে মাছ শিকার করতে না পারে সে দিকে নজর দিতে হবে। যে হারে ফিশিং ট্রলার বাড়ছে তাতে বঙ্গোপসাগরে অনিয়ন্ত্রিত ফিশিং হচ্ছে।