নিজস্ব শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ তৈরি করবো: শেখ হাসিনা

আগামীতে নিজস্ব শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ তৈরি করবো বলে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম বিএনএ-তে অনুষ্ঠিত নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান ২০১৮ আলফা এবং ডিইও ২০২০ ব্রাভো ব্যাচের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এ পরিকল্পনার কথা বলেন তিনি।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকারে আসার পর খুলনা শিপইয়ার্ড সেটা নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিই। সেটা প্রথম যখন সরকারে এসেছিলাম তখন। আমাদের ডকইয়ার্ড চট্টগ্রামে এবং নারায়ণগঞ্জে, সেটা আমরা নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিই। লক্ষ্য হলো নিজস্ব শিপইয়ার্ডে আমরা আমাদের যুদ্ধ জাহাজও তৈরি করবো। যার কাজ ইতোমধ্যে আমরা কিছু কিছু শুরুও করেছি। তাছাড়া কক্সবাজারের পেকুয়াতে আমরা সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করছি।

শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবার জন্য ইতোমধ্যে নৌবাহিনীতে মোট ২৭টি যুদ্ধ জাহাজ সংযোজন করেছি। ২০১৭ সালে আমরা নৌবহরে ২টি অত্যাধুনিক সাবমেরিন সংযোজন করি। ফলে, আমরা বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি পূর্ণ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছি।

‘আমরা নৌবাহিনীতে এভিয়েশন সিস্টেম থেকে শুরু করে সব কিছু করে দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের প্রশিক্ষণটাকে আরও উন্নত করার জন্য “বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স” নির্মাণ করে দিই। নৌবাহিনীর সদস্যদের আবাসন সমস্যা দূর করার জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিয়েছি। ’

বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না, শান্তি চায় উল্লেখ করে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, আমাদের সব সময় লক্ষ্য, আমাদের দেশটা স্বাধীন দেশ। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবো। আমরা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার সব রকম প্রস্তুতি নেবো। কিন্তু কারো সঙ্গে যুদ্ধ নয়, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়- এই পররাষ্ট্র নীতি নিয়েই আমরা চলবো।

‘আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। কিন্তু আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যেন সব ধরনের উদ্যোগ থাকে এবং প্রশিক্ষণ থাকে। সেভাবে আমরা আমাদের প্রতিটি বাহিনীকে গড়ে তুলছি। ’

১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেওয়া একটি ভাষণের উদ্বৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন ‘যে জাতি নিজেকে সম্মান করতে পারে না, আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে পারে না, সে জাতি দুনিয়ায় কোনোদিন বড় হতে পারে না। সেজন্য আজকে আমরা আত্মমর্যাদাবিশিষ্ট জাতি হিসেবে, আত্মমর্যাদা নিয়ে বাস করতে চাই। আমরা অন্য কারো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। অন্য কেউ আমাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক তাও আমরা সহ্য করবো না। আমরা এই নীতিতেই বিশ্বাসী। ’

নবীন অফিসারদের জাতির পিতার নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির পিতার এই নির্দেশটা সব সময় মেনে চলতে হবে। আমাদের নবীন অফিসার তোমরা জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলবে। তিনি জাতির জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন।

সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যে বিশাল সমুদ্র রাশি তার সম্পদটা যেন আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারি সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

দেশে সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মুজিববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। মুজিব বর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না।

শহরের সুযোগ-সুবিধা গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে দিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রাকৃতিক দুযোর্গসহ দেশের বিভিন্ন প্রয়োজনে নৌবাহিনী সদস্যদের সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে কৃতি প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পুরস্কার তুলে দেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল।