মৌসুমী ফল আনারসের ঘ্রাণে মুখর শ্রীমঙ্গলের কাঁচাবাজার

মৌসুমী ফল আনারসের ভরা মৌসুম চলছে এখন। আনারস এক প্রকারের গুচ্ছফল। বাজারের রাস্তা দুই পাশে আনারসের চোখজুড়ানো সারি। ঠেলাগাড়ি সামনের দিক মাটিতে মুখ দিয়ে তার পিঠে রাখা আনারসকে ডিসপ্লের মতো করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যেন পাইকারি-খুচরা ক্রেতারা এগুলো দেখে সহজে আকৃষ্ট হন।

দূর-দূরান্ত থেকে ছোট-বড় আড়ৎদাররা আসেন চায়ের রাজধানী খ্যাত অঞ্চল শ্রীমঙ্গলের আনারস বাজারে তাদের পছন্দমত আনারস কিনে নিতে। তবে স্থানীয় আনারস চাষিদের প্রতি ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ রয়েছে আনারসের খুচরা বিক্রেতাদের। তাদের দাবি আনারস চাষিরা ঠেলাগাড়ির ভেতরে ছোট-মাঝারি সাইজের আনারস রেখে বড় সাইজের আনারসের দাম নিয়ে থাকে। ফলে তাদের ক্ষতি হয়।

সম্প্রতি বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গলের আনারসের চাহিদা ব্যাপক। শ্রীমঙ্গলের কাঁচামালের বাজারে নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ, শায়েস্থাগঞ্জ, মিরপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গা থেকে ক্রেতারা আসেন। পছন্দ মত আনারস কিনে নিজেদের এলাকায় নিয়ে যান।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা চা বাগান ও পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আনারসের ফলন তুলনামূলক অনেক ভালো। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পিকআপ, জিপ, ঠেলাগাড়ি বোঝাই করে অন্যান্য ফলের সঙ্গে আনারসও শ্রীমঙ্গল কাঁচাবাজারে নিয়ে আসা হয়।

তেমনি নবীগঞ্জ থেকে শ্রীমঙ্গলে আসা একজন কাঁচামালের ব্যবসায়ী মঞ্জু দাস। তাকে দেখা গেল এক টনের ট্রাকে আনারস তুলে সাইজ করছেন। তিনি বলেন, সোমবার (২৪ মে) ১১০টা আনারস কিনেছি চার হাজার ৪০০ টাকায়। এগুল হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ নিয়ে বিক্রি করবো। প্রতি পিস ৪০ টাকা দরে কিনলেও বিক্রি করতে হবে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এর নিচে বিক্রি করলে ট্রান্সপোর্ট ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ উঠবে না। লস হবে।

বাজার ঘুরতে গিয়ে পাওয়া গেল ইমন নামে এক আনারস চাষিকে। তিনি বলেন, এ আনারসের নাম দেশি আনারস। এগুলো টক-মিষ্টি স্বাদের। এক ঠেলাগাড়ি আনারস বিক্রয়ের জন্য নিয়ে এসেছেন। নিলামের মাধ্যমে ১০০ পিস তিন হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। ঠেলা বাবদ খরচ আছে ২৭০ টাকা।

আনারসের খুচরা বিক্রেতা জমশেদ মিয়া বলেন, বড় সাইজের আনারসের দাম হালি (৪টা) প্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। মাঝারি সাইজের হালি প্রতি দাম ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। আর ছোট সাইজের নাম ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা।

শ্রীমঙ্গল কাঁচাবাজারের আড়ৎদার নজরুল ইসলাম বলেন, শ্রীমঙ্গলে ৭০০ জন আড়ৎদার তালিকাভুক্ত রয়েছেন। তবে এর বাইরে আরো থাকতে পারে। মূলত আমরাই চাষিদের কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে আনারসগুলো নির্ধারিত দামে বিক্রেতাদের কাছে বিক্রিতে সহায়তা করি। এক ঠেলার আনারস বিক্রি করে দিলে আমার ১০০ টাকা থাকে। দৈনিক আমার আড়ৎ থেকে ২০-৩০ হাজার টাকার আনারসসহ কাঁচামাল বিক্রি করি।

শ্রীমঙ্গল আনারস বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আবুল মিয়া চাষিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, কোনো কোনো আনারস চাষিরা চিটার (প্রতারক)। এক ঠেলা আনারসের ভেতরে ছোট মাল ঢুকিয়ে দেয়। ফলে পুরো ঠেলা গাড়ি বড় সাইজের দামে কিনতে গিয়ে আমাদের লোকসান হয়। দেখা যায় ৩০-৪০ ভাগ আনারসই মাঝারি বা ছোট সাইজের।

খুচরা বিক্রেতা বলেন, রোববার (২৩ মে) দুই ঠেলাগাড়ির ২০০ আনারস কিনেছি। দাম পড়েছে সাত হাজার ৩০০। প্রতি পিস আনারস প্রায় ৩৬ টাকা দরে কিনেছি। মালগুলো নামিয়ে দেখি ঠেলাগাড়ির নিচে ছোট আর মাঝারি সাইজের আনারস। এখন এগুলো কি প্রতি পিস সর্বনিম্ন ধার্যকৃত মূল্য ৪০ টাকায় বিক্রি করতে পারবো?