‘ইয়াস’ এর প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার: বাঁধ, রাস্তা ও ঘেরের ক্ষতি

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে গত ২ দিন ধরে বাংলাদেশের বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হয়। তবে গতকাল বুধবারের (২৬ মে) অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে, সেসঙ্গে কয়েকফুট উচ্চতায় প্লাবিত হয় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল।

এতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন সাধারণ মানুষ। দিনের পাশাপাশি বুধবার দিনগত রাতেও দমকা হাওয়ার সঙ্গে বেশিরভাগ সময়ে আকাশ মেঘলা ছিল, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হয়েছে মাঝে মাঝে।

বরিশাল জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায় ৩১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৭৫৫টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছিল। প্রতি উপজেলায় উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ‘নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ স্থাপন করা হয়।
Tidal water

পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি উপজেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিক্যাল টিম ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়।

বুধবার বিকেল থেকে বিভিন্ন উপজেলায় পানি বন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এদিন দুপুর থেকে নদী তীরবর্তী উপজেলা গুলোতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি বৃদ্ধি পেলেও ভাটার প্রভাবে সন্ধ্যা নাগাদ পানি কমতে শুরু করে।

এদিকে দুপুরে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নিয়ামতি ও গাড়ুরিয়া ইউনিয়নে দু’জন শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে।

বুধবার রাতে মিডিয়া সেল কর্তৃক প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর, জয়নগর, বিদ্যানন্দপুর, চাঁনপুর, চর গোপালপুর, গোবিন্দপুর, দরিচর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। জোয়ারের পানিতে এসব অঞ্চলের কাঁচা রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি মাছের ঘের ও পানের বরজের ক্ষতিসাধন হয়েছে। এছাড়া চাঁদপুর ইউনিয়নে নির্মাণাধীন রাস্তা ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ লাইনেরও ক্ষতি হয়েছে।

মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়ন, চরকালেখান ইউনিয়নে পানির স্রোতে সড়ক ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে।

হিজলা উপজেলার হিজলা বাঁধের ৩০০ মিটার বাঁধ ধসে গেছে এবং বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে কম বেশি কাঁচা-পাকা রাস্তার বেশ ক্ষতি হয়েছে।

বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে এবং পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি বেড়িবাঁধ, ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে নলুয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া পাদ্রিশিবপুর ইউনিয়ন এ স্লুইসগেট ভেঙে প্লাবিত হয়েছে রাস্তা, ঘর, বাড়ি, ফসলের মাঠ। এ উপজেলার ভরপাশা, রংগশ্রী, গাড়ুরিয়া ইউনিয়নের পানি বন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়।

বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া, শায়েস্তাবাদ, চন্দ্রমোহন ও চরমোনাই ইউনিয়নে জোয়ারের প্রভাবে ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্নস্থানে মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে।

বাবুগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকা জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে বেশকিছু পুকুর প্লাবিত হয়ে মাছের ক্ষতি হয়েছে।

উজিরপুর পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। উজিরপুর-শাতলা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি জোয়ারের পানি উঠে ফসলেরও ক্ষতিসাধন হয়েছে।
water

এছাড়া গৌরনদী, বানারীপাড়া, আগৈলঝাড়া উপজেলায় নদী-খালে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পায় এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। অপরদিকে অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে বরিশাল নগরের নিম্নাঞ্চলসহ মধ্য শহরের বেশ কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করে, তবে ভাটার সঙ্গে সঙ্গে তা নেমেও যায়।

সার্বিক তদারকির কাজ করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ । সঙ্গে ছিলেন কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা। আর মেয়রের উদ্যোগে আগে থেকেই সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য খোলা হয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।