খুলনার সেই আঁখির স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে

খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারার রূপসা চরের কিশোরী আঁখির (১৭) লেখাপড়া দারিদ্র্যের কশাঘাতে বন্ধ হয়ে যায়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তার পরিবার। দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে মাস্কের সঙ্কট দেখা দিলে বাজারে চড়া দামে বিক্রি হতে থাকে মাস্ক। ওই সময় আঁখি তার সেলাই মেশিন দিয়ে মাস্ক তৈরি করা শুরু করে এবং তা কম দামে এলাকার লোকজনের কাছে বিক্রি করে। অনেক সহায় সম্বলহীন মানুষকে সে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করে এবং মাস্ক ব্যবহারে সচেতনতা গড়ে তোলে।

ওয়ার্ল্ড ভিশন নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা পরে তার এই উদ্যোগ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয় যা পরবর্তিতে জাতিসংঘের নজরে আসে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় সংস্থা তারই ফলশ্রুতিতে (ইউএনওসিএইচএ) গত ১৯ আগস্ট বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে আঁখিকে সহ চার বাংলাদেশিকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আঁখি ছাড়া অন্য তিনজন হলেন ব্র্যাকের স্থপতি রিজভী হাসান, অনুবাদক সিফাত নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত।

আঁখির স্বপ্নকে এবার বাস্তবে রুপ দিতে এগিয়ে এসেছেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী এবং তার স্ত্রী সারমিন সালাম।
গত শনিবার ১৯ সেপ্টেম্বর রূপসা উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই আঁখিকে পোশাক খাতের উদ্যোক্তা বানাতে গার্মেন্ট মেশিনারিজ দিয়েছেন আবদুস সালাম মুর্শেদী। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে ‘সালাম মূর্শেদী সেবা সংঘ’র মাধ্যমে আঁখিকে ওভার লক, ফ্যাটলক, পেস্নন, স্টিচ ও কাটিং মেশিনসহ ১৫টি মেশিন প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সালাম মূর্শেদী সেবা সংঘের চেয়ারম্যান সারমিন সালাম।

উক্ত অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী জানান, এই যন্ত্রাংশ দিয়ে আঁখি যাতে একটি পোশাক কারখানা শুরু করতে পারে তার জন্য সরকারি জমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জমি পেলেই আব্দুস সালাম মূর্শেদী সেখানে আঁখির জন্য পোশাক তৈরির কারখানা করে দেবেন। আঁখি যাতে এই অত্যাধুনিক সেলাই মেশিনগুলো ব্যবহার করতে পারেন এজন্য তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, রূপসা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন বাদশা, দিঘলিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি খান নজরুল ইসলাম, তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম, দিঘলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম, তেরখাদা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এফ এম অহিদুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, তেরখাদা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোলস্না আকরাম হোসেন, দিঘলিয়া উপজেলার সামছুন্নাহার।

আঁখি তার বক্তব্যে বলেন, ‘দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য এত বড় স্বীকৃতি পেয়েছি। তাই সারাজীবন অসহায়দের পাশে থাকতে চাই। ভবিষ্যতে নিজের দোকানের পরিধি আরও বড় করে পরিবারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি অসহায় নারীদের কাজের সুযোগ দেওয়ার ইচ্ছা আছে তার।’

ভূমিহীন ভাসমান আঁখির বাবা মাসুদ মোল্লা (৪৭) চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতেন। তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন সেখানে কর্মরত অবস্থায় এবং শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। আঁখির মা আনোয়ারা বেগমও (৪০) চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করেন, কিন্তু তার একার রোজগার সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিলনা।