কক্সবাজার থেকে একযোগে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৩৪৭ সদস্যকে বদলি

কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় ইমেজ সংকটে পড়া পুলিশবাহিনী ঢেলে সাজাতে ব্যাপক রদবদল শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার পর্যন্ত বদলি করা হয়েছে ১ হাজার ৩৪৭ জনকে। এদের মধ্যে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ আট শীর্ষ কর্মকর্তা রয়েছেন, আরো রয়েছেন ১৩৯জন উপপরিদর্শক (এসআই), ৯২জন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ১ হাজার ৫৫ জন নায়েব ও কনস্টেবল। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কক্সবাজারের ডিবি ও থানাসহ সব পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা ৩৪জন পরিদর্শককে বদলি করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সে সংখ্যা বেড়ে ৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

যেসব পুলিশ সদস্যদের কক্সবাজার জেলায় পদায়নের জন্য চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ টেলিকম অডিটোরিয়ামে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ তাদের ব্রিফ করেন। আইজিপি তাদের কীভাবে সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্বপালন করতে হবে এ ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেন। মরণনেশা ইয়াবার বিরুদ্ধে জোরাল ভূমিকা পালন করতেও আইজিপি তাদের নির্দেশ দেন। ইয়াবা কারবারের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িয়ে পড়লে তার পরিণতি কী হতে পারে এ বার্তাও দিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।

মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। এ কারণে কিছু পুলিশ সদস্যের জন্য লোভনীয় পদায়ন হচ্ছে কক্সবাজারে বদলি হয়ে আসা। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুর পর শেষ পর্যন্ত সদর দপ্তর থেকে পুলিশের এ কাজের লাগাম টানা শুরু হয়। প্রথম বদলি হন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রধান পরিদর্শক লিয়াকত আলী। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার বোনের মামলার পর বদলি হন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। এর পরপরই কক্সবাজার সদর থানার ওসি আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির বদলি হন।

গত ২১ সেপ্টেম্বর বদলি করা হয় কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার পদের সাত কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বদলি হওয়ার পর টেকনাফ থানায় বদলি হয়ে আসা নতুন ওসি মো. আবুল ফয়সলকে বদলি করা হয় ১১ দিনের মাথায়। টেকনাফে ওসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের অর্থের লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাকে বদলি করা হয়। পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নিয়মিত বদলিরই অংশ, কক্সবাজার অঞ্চলের সব পুলিশ সদস্যকেই বদলি করা হবে‘। পুলিশের ডিআইজি নিয়মিত বদলি বললেও সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মূলত কক্সবাজার জেলা পুলিশের এ শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়।’

গত বুধবার রাতে বদলি হওয়া আদেশ অনুযায়ী সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আখতারকে। কক্সবাজার সদর থানার ওসি মাসুম খানকে এবং কুতুবদিয়া থানার ওসি একেএম সফিকুল আলম চৌধুরীকে খুলনা রেঞ্জে, মহেশখালী থানার ওসি দিদারুল ফেরদৌসকে বরিশাল রেঞ্জে, রামু থানার ওসি আবুল খায়েরকে রাজশাহী রেঞ্জে, চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমানকে খুলনা রেঞ্জে, পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুল আজমকে রংপুর রেঞ্জে এবং টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহাকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। এভাবে দেশের বিভিন্ন রেঞ্জে অন্য সব পরিদর্শককে বদলি করা হয়েছে।

এর আগে চট্টগ্রাম মহানগরের সব পুলিশ সদস্যকে একযোগে চট্টগ্রাম রেঞ্জের বাইরে বদলি করা হয়েছিল, ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ ও হত্যার পর। ফটিকছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে জামাল উদ্দিন চৌধুরীর কঙ্কাল উদ্ধার করা হয় ২০০৫ সালের ২৮ আগস্ট।