ফাইনালে খুলনা মাশরাফির ৫ উইকেট শিকার

বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপের প্রথম কোয়ালিফায়ারে প্রথম দল হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে জেমকন খুলনা। মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বাধীন খুলনা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে হারিয়েছে বিশাল ব্যবধানে। জেমকন খুলনার ব্যাটসম্যানদের দাপটের পর ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট নিয়ে চমক দেখান মাশরাফি বিন মর্তুজা। ফলে ৪৭ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাকিব-মাশরাফিরা।

খুলনার করা ২১০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রথম ওভারে ঝড় তোলেন লিটন দাস। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি দিয়ে শুরু, চতুর্থ বলে হাঁকান ছক্কা। কিন্তু পঞ্চম বলে নেয়া সিঙ্গেলটিই যেন বিপদ ডেকে আনে চট্টগ্রামের জন্য। মাশরাফির শেষ বলে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় ডিপ মিড উইকেটে দাঁড়ানো শামীম পাটোয়ারির হাতে ধরা পড়েন সৌম্য সরকার, ফেরেন গোল্ডেন ডাক নিয়ে।

আলআমিন হোসেনের পরের ওভারে একটি চার ও ছয়ের মারে ১২ রান তুলে নেন লিটন। কিন্তু এমন ঝড়ো শুরুটা ধরে রাখতে পারেননি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ইনিংসের চতুর্থ ও মাশরাফির করা দ্বিতীয় ওভারে বাউন্সের তারতম্য বুঝতে না পেরে বোল্ড হন ১৩ বলে ২৪ রান করা লিটন। মাঝে এক ওভার করে মাত্র ১ রান খরচ করেন সাকিব আল হাসান।

তবে সাকিবের পরের ওভারে আর ধরে খেলেননি চট্টগ্রাম অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন, প্রথম দুই বলেই হাঁকান জোড়া ছক্কা। সেই ওভারে আসে ১৫ রান। দুই ওপেনারের ব্যর্থতার দিনে বিশ্বজয়ী অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে এগুতে থাকেন মিঠুন। দুজনের তৃতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৪৭ বলে ৭৩ রান। জয়-মিঠুনের জুটিতে দলীয় ১০০ করে ফেলে চট্টগ্রাম।

দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসেই এ জুটি ভাঙেন মাশরাফি, দ্বাদশ ওভারের প্রথম বলে ২৭ বলে ৩১ রান করা মাহমুদুল জয়ের ক্যাচ নেন ইমরুল কায়েস। বেশিদূর যেতে পারেননি মিঠুনও। তিনি সাজঘরে ফেরেন ১৪তম ওভারে, আউট হওয়ার আগে করেন ৩৫ বলে ৫৩ রান। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৩টি করে চার ও ছয়ের মার।

মিঠুন ফিরে যাওয়ার পরেই মূলত লেখা হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। এরপর অনেকটা চমক হিসেবেই আসে মাশরাফির ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। মিঠুন ও জয়ের জুটি ভাঙার পর মাশরাফিকে বোলিং থেকে সরান খুলনার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আবার আনেন ১৮তম ওভারে। সেই ওভারের প্রথম তিন বলে ৮ রান দেন মাশরাফি। কিন্তু পরের তিন বলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান, ফেরান শামসুর রহমান (১০ বলে ১৮) ও মোস্তাফিজুর রহমানকে (২ বলে ০)।

সবমিলিয়ে নিজের ৪ ওভারে ৩৫ রান খরচায় ৫টি উইকেট নেন মাশরাফি। এটি তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার। এর আগে সেরা বোলিং ছিল বিপিএলে নেয়া ১১ রানে ৪ উইকেট। সেটি ছাপিয়ে আজ একাই ৫ উইকেট নেন মাশরাফি।

শুরুতে জোড়া উইকেটের পর মাঝে এসে জুটি ভাঙা, শেষে আবার লেজ মুড়ে দেয়া; যেন মাশরাফির কাছেই হার মানল চট্টগ্রামের ব্যাটিং লাইনআপ।

মিরপুর শেরে ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন চট্টগ্রামের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। খুলনার হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন জহুরুল ইসলাম অমি ও জাকির হাসান। শুরু থেকেই ২২ গজে ঝড় তোলেন দুই ওপেনার।

খুলনা প্রথম উইকেট হারায় দলীয় ৭১ রানে। আউট হওয়া জাকিরের এই জুটিতে অবদান ছিল ১৬ রান। জাকির মন্থর গতিতে খেললেও এরপর যে-ই নেমেছেন করেছেন ঝড়ো ব্যাটিং। প্রত্যেকেই খেলেছেন ক্যামিও ইনিংস। আউট হওয়ার আগে ৫১ বলে ৮০ রান করেন জহুরুল। এছাড়া কায়েস খেলেন ১২ বলে ২৫ রানের ইনিংস।

শেষদিকে মিরপুরে চার ছক্কার ঝড় তোলেন রিয়াদ। মাত্র নয় বলে ৩০ রান করেন তিনি। সাকিবও এদিন নামের প্রতি কিছুটা সুবিচার করেছেন। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি ১৫ বলে করেন ২৮ রান। এছাড়া আরিফুল ফেরেন ১৫ করে। শেষদিকে দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারালেও বড় সংগ্রহ নিয়েই মাঠ ছাড়ে খুলনা।