কলাবাগানে স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ: দিহানের বাসার দারোয়ানের জবানবন্দি

রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় গ্রেফতার ফারদিন ইফতেখার দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল মিয়া সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে দুলালকে আদালতে হাজির করে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাগাবান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আছাদুজ্জামান।

৮ জানুয়ারি একই আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন এ মামলার একমাত্র আসামি দিহান। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। এদিকে ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের এসি আবুল হাসান জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার দিহানের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দিহানের বাসার সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ দেখতে পেয়েছে, ৭ জানুয়ারি বেলা ১২টা ১২ মিনিটে কলাবাগানে দিহানের বাসার সিঁড়িঘরের দিকে যায় আনুশকা। বেলা ১টার দিকে বাসার সামনে রহস্যজনক গতিবিধির দেখা মেলে তিন ব্যক্তির। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বেলা ১টা ৩৬ মিনিটে বাসা থেকে বের হয় দিহানের গাড়ি।

তবে তাদের তিনজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। দুলাল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, দিহানের বাসায় ঘটনার দিন একাই গিয়েছিলেন আনুশকা। ঘটনার পর দিহান একাই গাড়িতে করে আনুশকাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। বাসার ভিতরে ও হাসপাতালে যাওয়ার সময় তাদের সঙ্গে কেউ ছিল না। অবশ্য ৭ জানুয়ারি ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন দুলাল। ১১ জানুয়ারি মামলার সাক্ষী হিসেবে দুলালকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। মামলাসূত্রে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারি কলাবাগানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠে। ওই শিক্ষার্থীকে মুমূর্ষু অবস্থায় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় দিহানকে একমাত্র আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন মেয়েটির বাবা আল আমিন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৭ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। এর এক ঘণ্টা পর তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে নোট আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিল। আসামি দিহান বেলা আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ওই শিক্ষার্থীর মাকে ফোন করেন। দিহান জানান, ওই মেয়ে তার বাসায় গিয়েছিল।

হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে। অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক বেলা ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসপাতালে পৌঁছান।হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন আসামি নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছেন। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।

খবর পেয়ে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি দল হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠান। মামলার এজাহারে ও এখন পর্যন্ত মামলার তদন্তে এ ঘটনায় শুধু দিহান জড়িত থাকার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও আনুশকার বাবা আল আমিন দাবি করছেন, ঘটনা একা ঘটাননি দিহান। আনুশকাকে যেভাবে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে এতে আরও কেউ জড়িত রয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।