মালয়েশিয়ায় সরকারি প্রক্রিয়ায় লাখ টাকা দিলেই বৈধতা

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে থাকা শ্রমিকদের বৈধ হতে সে দেশের সরকারকে প্রায় এক লাখ টাকা করে দিতে হবে। দেশটিতে অবস্থানরত অবৈধ শ্রমিকদের কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে সে দেশের চারটি খাতে বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় ব্যয় করতে হবে এই অর্থ। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম দেশটিতে অবৈধভাবে থাকা তিন লাখেরও বেশি বাংলাদেশির কাছে এক নতুন আশার আলো সঞ্চার করেছে। সরকারি হিসাবের বাইরে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানেও আলাদা খরচ থাকবে বলে জানা গেছে।

মালয়েশিয়ায় বৈধ হতে সরকারিভাবে কত টাকা খরচ হবে, দেশটির অভিবাসন বিভাগ তার তালিকা প্রকাশ করেছে। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ‘ডিপোজিট ফি’ (জামানত) হিসেবে ৫০০ রিঙ্গিত, ‘কমপাউন্ড’ (জরিমানা) হিসেবে এক হাজার ৫০০ রিঙ্গিত, ‘লেভি’ হিসেবে এক হাজার ৮৫০ রিঙ্গিত, কভিড পরীক্ষা ফি বাবদ ৩৮০ রিঙ্গিত, ‘মেডিক্যাল ফোমিমা’ খরচ ১৮০ রিঙ্গিত, ‘পারমিট’ (পিএলকেএস) খরচ ২০৫ রিঙ্গিত, বীমা বাবদ খরচ ১৮০ রিঙ্গিত করে দিতে হবে। সে হিসাবে ইমিগ্রেশনের জন্য একজন ব্যক্তি মালয়েশিয়ার সরকারকে দেবেন মোট চার হাজার ৭৯৫ রিঙ্গিত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৫ হাজার ৯০০ টাকা।

মালয়েশিয়া সরকারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী নির্মাণ খাত, উৎপাদন খাত, চাষাবাদ বা বৃক্ষরোপণ খাত ও কৃষি খাতে কাজ করা অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচির জন্য কোনো এজেন্ট বা ভেন্ডর নিয়োগের প্রয়োজন নেই জানিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুধু নিয়োগকর্তা বা কম্পানি অবৈধ কর্মীদের নামসহ সরাসরি ইমিগ্রেশনে আবেদন করবে। নিজে নিজে ইমিগ্রেশনে গিয়ে বৈধ হওয়া যাবে না। তবে শুধু বাংলাদেশিরাই নয়, বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারবেন মালয়েশিয়ার সোর্স কান্ট্রি হিসেবে তালিকাভুক্ত ১৫টি দেশের অনিয়মিত কর্মীরা।

বৈধ হওয়ার কার্যক্রমে আবেদন করতে চাইলে ওই চারটি খাতে যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রমিক নিয়োগ করতে চায়, সেসব প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ শ্রমিকদের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, মালয়েশিয়ায় প্রবেশের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব লেবার ফর পেনিনসুলার মালয়েশিয়ার ইন্টিগ্রেটেড ফরেন ওয়ার্কারস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে।

আবেদনের পর প্রথমেই অভিবাসন দপ্তর তাদের আইনগত বিষয়টি যাচাই করে দেখবে। এরপর সেই আবেদন যাবে শ্রম দপ্তরে। তাদের অনুমোদনের বিষয়টি আসবে। শ্রম দপ্তরের অনুমোদন মিললে ইমিগ্রেশনে আঙুলের ছাপ, মেডিক্যাল, করোনাভাইরাস পরীক্ষা, বিভিন্ন ফি প্রদানের বিষয় আসবে। সাত দিনের মধ্যে এই আবেদনের প্রক্রিয়া শেষ করবে দপ্তরটি।

মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কাজ করতে গিয়ে পরবর্তীকালে অনেক বাংলাদেশি অনিয়মিত হয়ে গেছেন। আবার পড়াশোনা ও বেড়াতে গিয়েও সেখানে অনেকে অবৈধভাবে রয়ে গেছেন। নৌকায় বা সীমান্ত পাড়ি দিয়েও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের যাওয়ার খবর শিরোনাম হয়েছে। তবে মোট কত শ্রমিক বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন কিংবা বৈধ হওয়ার পরে কত দিন এই কর্মীরা মালয়েশিয়ায় বসবাস করতে পারবেন—এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।