গণতন্ত্র বাদ দিয়ে নেপালকে রাজতন্ত্রে ফেরা এবং ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ

গণতন্ত্র বাদ দিয়ে রাজতন্ত্রে ফেরার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে নেপালে। শনিবার রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে বিশাল বিক্ষোভ করে, রাজপরিবারের সমর্থকরা।

বলা হচ্ছে, গণতন্ত্রের যাত্রা শুরুর পর, রাজতন্ত্রের পক্ষে এটাই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ নেপালে। ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় বাদ দিয়ে, নেপালকে আবার হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণারও দাবি জানান, বিক্ষোভকারীরা।

গণতন্ত্রের দাবিতে হরহামেশাই বিক্ষোভ হয় নানা দেশে। তবে, নেপালের এ বিক্ষোভ ব্যতিক্রম। গণতন্ত্র বাতিল করে, রাজতন্ত্রে ফেরার দাবিতে, আন্দোলনে নেমেছে হাজারো মানুষ।

কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন শহরে ছোটখাটো কর্মসূচি পালন করছিলো রাজতন্ত্রের সমর্থকরা। শনিবার রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে সারা দেশ থেকে জড়ো হন তারা। মিছিলে সিংহাসনচ্যুত রাজা জ্ঞানেন্দ্র’র ছবি বহন করতে দেখা যায় অনেককে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নেপালকে রক্ষায় আবারও রাজার হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার বিকল্প নেই।

রাজতন্ত্রপন্থী সমাবেশের নেতা আমির কেসি বলেন, রাজনৈতিক পার্টি সমাবেশের ডাক দিলে ভাড়া করে লোক আনতে হয়। কিন্তু এই কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষ স্বপ্রণোদিত হয়ে যোগ দিয়েছেন। রাজতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুন্দর নেপালের স্বপ্ন পূরণ হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবো আমরা।

হিমালয় কন্যা নেপালে দীর্ঘ ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে ২০০৮ সালে। মাওবাদীদের হাত ধরে শুরু হয় গণতন্ত্রের যাত্রা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ নিয়ে, এক যুগ পার না হতেই, বিরক্ত অনেক নেপালি। রাজতন্ত্র সমর্থকের বিক্ষোভকে ঘিরে নেপালে নতুন অস্থিরতার শঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

এদিকে, ধর্মনিরপেক্ষ নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণার দাবি খারিজ হল গণ পরিষদে। দেশের নাগরিকদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী, এই যুক্তিতে হিন্দুপন্থী জাতীয় গণতান্ত্রিক দলের তরফে কমল থাপা প্রস্তাব দেন, হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ফের স্বীকৃত হোক নেপাল। কিন্তু আজ গণ পরিষদে চেয়ারম্যান সুবাসচন্দ্র নেমবাং ঘোষণা করেন, কমল থাপার প্রস্তাব মানা হয়নি। এর পরে গণ পরিষদে ভোটের দাবি করেন থাপা। সেখানে ৬০১টি আসনের মধ্যে মাত্র ২১ জন কমল থাপার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন।

২০০৭ সাল পর্যন্ত রাজতন্ত্র পরিচালিত নেপাল বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু তার পর রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তরের সময় সাধারণ মানুষের আন্দোলনের জেরে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয় হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই দেশটি।