মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন যে, ‘মীরজাফর ও খন্দকার মোশতাকের পর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে তৃতীয় বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত হয়ে আছেন। দেশের নাম বাংলাদেশ রেখে কার্যত পাকিস্তানে পরিণত করেছিলেন জিয়াউর রহমান।
বাংলাদেশের রাজনীতিকেও ধ্বংস করেছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে তিনি মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন’।
শনিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আবার ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে বিএনপির স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিএনপি ৭ মার্চকে বিকৃত করার চেষ্টা করছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ৭ মার্চেই বঙ্গবন্ধু প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইতিহাসই বিএনপিকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। ইতিহাস মিথ্যাকে গ্রহণ করে না। তাই মিথ্যার রাজনীতিই বিএনপিকে ধ্বংস ও নিঃশেষ করবে’।
মন্ত্রী বলেন,‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে বিভিন্নভাবে চাপের মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেসব চাপ উপেক্ষা করে বিচার সম্পন্ন করেছেন। খালেদা জিয়ার বিচার করার সময়ও নানামুখী চাপ ছিল। কিন্তু তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেখিয়েছেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি করলে ক্ষমা পাওয়া যায় না’।
আলোচনায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। বিএনপি-জামায়াত চক্র যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে চলেছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত। ১৯৭৩ সালের আইন অনুযায়ী জিয়াউর রহমানও একজন রাষ্ট্রদ্রোহী। তিনি বেঁচে থাকলে এ নিয়ে তারও বিচার হতো। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে বিতর্কিত করতে চায়। এজন্যই তারা ৭ মার্চ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান আয়োজন করছে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কথা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বিশ্বের সব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আর জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন’।
তারা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবা ছিলেন রাজাকার। জিয়া ছিলেন পাকিস্তানের চর। তিনি কোনো অবস্থাতেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। মানুষের চাপে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। জেনারেল ওসমানী তার কোর্ট মার্শাল করতে চেয়েছিলেন। আদালতের রায় আছে, জিয়া গায়ের জোরে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন।
পরবর্তীকালে জিয়া তার মন্ত্রিসভায় রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের স্থান দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় গিয়ে জিয়া ১১ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিলেন। এখন দেশের উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারকে শুভেচ্ছা জানানোর পরিবর্তে বিএনপি যেভাবে নতুন করে ইতিহাস বিকৃতির রাজনীতি শুরু করেছে এটা কাম্য নয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণালালিত বাংলাদেশে এই অপরাজনীতির অবসান হওয়া জরুরি’।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান। আলোচনা করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া।
সভাপতিত্ব করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। সঞ্চালনা করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)।
সেমিনারের মুল প্রবন্ধ লেখেন আলী হাবিব, পাঠ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাসুম বিল্লাহ।