রাঙামাটির নানিয়ারচরের সেই কাঙ্খিত সেতু এখন দৃশ্যমান

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলাটি একটি দুর্গম উপজেলা যা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে ছিল বঞ্চিত। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারণে উন্নয়নে অগ্রসর হতে পারেনি উপজেলাটি। তাই দীর্ঘ বছর ধরে নানিয়ারচরের বাসিন্দাদের দাবি ছিল, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের চেঙ্গি নদীর উপর একটি সংযোগ সেতুর। বর্তমান সরকারের কারণে রাঙামাটির সেই স্বপ্নের সেতু এখন দৃশ্যমান। এরই মধ্যে উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি করা হয়েছে সম্পন্ন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন শিগগিরই জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে এ সেতু। শুধু নানিয়ারচর উপজেলার বাসিন্দারা নয়, এ সেতুর সুফল ভোগ করবে রাঙামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু, খাগড়াছড়ি-সাজেক-বাঘাইছড়ির বাসিন্দরাও। এতে যেমন সচল হবে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঠিক তেমনি অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন হবে কৃষকসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর নানিয়ারচর সেতুর কাজ শুরু হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটার এবং প্রস্থ ৯.৮ মিটার। সেতু প্রকল্পটির মোট বাজেট ২২৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য খরচ হয় ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সেতুটির সাথে সংযোগ সড়ক রয়েছে ২.২ মিটার। এই সড়কের প্রস্থ ৭.৯ মিটার।

রাঙামাটি নানিয়ারচর সেতুর প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর মো. মিজানুর রহমান ফকির বলেন, নানিয়ারচর সেতুটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। এ সেতুর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাঙামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু, খাগড়াছড়ি-সাজেক-বাঘাইছড়ি উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। আর এ সেতুর কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে একটু সময় লেগেছে। আগামী ডিসেম্বরে সেতু উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী শেখ মো. আলমগীর কবির বলেন, এ সেতু দেখে মনে হচ্ছে বহু বছরের লালিত স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আগে নদী পথে যাতায়াতের জন্য এখানে ব্যবসা করা খুব কঠিন ছিল। ঠিক মতো মালামাল আনা-নেওয়া করা যেত না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পাড়াপাড় হওয়া মুশকিল ছিল। শুধু তাই নয়, অসুস্থ রোগীদের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর ছিল। নদী পাড় হতে না পেরে অনেকে ঘাটে প্রাণ হরিয়েছে। এখন সে ভোগান্তি কমে যাবে।

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, সরকারের উপহার নানিয়ারচর সেতু এ অঞ্চলের মানুষের জন্য আশির্বাদ। এ সেতুর জন্য মানুষের জীবনে যেমন উন্নয়ন হবে। ঠিক তেমনি এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম কমে যাবে। শান্তি ফিরে আসবে নানিয়ারচরে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে নানিয়ারচরের সর্বোচ্চ আনারস উৎপাদন হয়। সেতু হওয়ায় পাহাড়ের উৎপাদিত ফল-মূল সহজে সারা দেশে সরবরাহ করা যাবে। লাভবান হবে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদীপ কান্তি দাশ বলেন, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির ৪টি উপজেলার সঙ্গে সমগ্র দেশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। আর তাতে পাহাড়ের অনগ্রসর একটি অংশে এ সেতু খুলে দেবে সম্ভাবনার দুয়ার। এতে করে নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়িতে উৎপাদিত পণ্য সহজে বহনের মাধ্যমে বাজারজাত করতে স্থানীয় কৃষকরা।