‘এখন ফেলে দেবো না, ওরে আরেকটু সাইজ করো’

ফোনে ওরা কাকে যেন বলছিল, ‘ফেলে দিবো নাকি রাখবো? না না এখন ফেলে দেবো না। ওরে আরেকটু সাইজ করো’। ওরা আমার পায়ের গোড়ালিতে আঘাত করেছে। শার্ট পরা অবস্থায় পিঠে বেল্ট দিয়ে মেরেছে। যেন আঘাতের চিহ্নগুলো বুঝা না যায়।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই নিজের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন সদ্য উদ্ধার হওয়া সাপ্তাহিক সূর্যোদয় পত্রিকার প্রতিবেদক সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার।

রোববার (১ নভেম্বর) রাতে সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকা থেকে উদ্ধার করার পর তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসায় চার সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসাধীন সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার বলেন, ভাড়ায়চালিত একটি মোটরসাইকেলে ওঠার পরপরই আমার পিছনে আরেকজন ব্যক্তি উঠে বসেন। তিনি আমার নাকে কিছু একটা দিয়ে মাস্ক পরিয়ে দেন। অনেকক্ষণ পর বুঝতে পারলাম-আমি অ্যাম্বুলেন্সে আছি। এরপর আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেকক্ষণ পর কাপড় পরা অবস্থায় তারা আমাকে মারধর করে।

সংবাদ প্রকাশের কারণে এই ঘটনা কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর নিউজ করবি কি-না বল। একথা বলে বলে আমাকে সাত-আট ঘণ্টা মারধর করেছে। কিন্তু কোন নিউজের কারণে আমাকে অপহরণ করা হয়েছে তা বলতে পারছি না।

আমাকে কোন জায়গায় আটকে রাখা হয়েছিল তাও বুঝতে পারিনি। তবে যেখানে আটকে রেখেছিল, সেখান থেকে ট্রেনের আওয়াজ শোনা গেছে।

চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুর সাত্তার বলেন, গোলাম সরওয়ারের চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বেশ কিছু টেস্ট দেওয়া হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা ভালো।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবির বলেন, চিকিৎসা দেওয়ার পর অনেকটা ভালো আছেন তিনি। শরীরে বেশ কিছু দাগ রয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে, তিনি শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কোনো কাটা-ছেঁড়া না থাকলেও দাগ দেখে বুঝা যাচ্ছে, নির্যাতনের পরিমাণ বেশি ছিল।

তিনি আরও বলেন, সোমবার (২ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স এবং মানসিক বিভাগের প্রধানের সমন্বয়ে চার সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।