করোনাঃ বেড়েছে ৮ প্রকল্পের মেয়াদ, আয় কমেছে ৯৬ কোটি টাকা

মহামারী করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ ও বিভিন্ন প্রকল্পের। করোনায় ২৬টি প্রকল্পের ক্ষতির পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ আয় থেকেও বঞ্চিত হয়েছে দেশের রেলওয়ে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের ৮টি চলমান প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে না।

করোনার কারণে ২০২০ সালের আয় ঠেকেছে আগের বছরের প্রায় অর্ধেক, ক্ষতির পরিমাণ ৯৬ কোটি ৫২ লাখ ১৭ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের আয় যেখানে ২৩২ কোটি ৬৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা। সেখানে ২০২০ সালের করোনার বছরে আয় ১৩৬ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

করোনায় যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ থাকার সময় পর্যাপ্ত মালবাহী ট্রেন চালানোর সক্ষমতা থাকলেও রেলওয়ের কর্মকর্তাদের অবহেলায় এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া প্রকল্পের কাজও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখা যেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্প, পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ উন্নয়ন প্রকল্প, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেলসংযোগ নির্মাণ প্রকল্পসহ মোট ৮টি প্রকল্পের কাজ করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না।

সরকারের মেগা প্রকল্পের মধ্যে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার সময়সীমা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে না। কারণ করোনায় লকডাউনে কয়েক মাস প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এ প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪৭ শতাংশ। রেললাইন তৈরির জন্য মাটি ভরাট কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। প্রকল্পের ৯টি স্টেশন বিল্ডিংয়ের মধ্যে ৫টির নির্মাণকাজ হয়েছে ২০ শতাংশ। ১৪৫টি কালভার্টের মধ্যে ৭০টি কাজ। ৩০টি কালভার্টের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।

৩৯টি ব্রিজের মধ্যে ৩০টির কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। কক্সবাজারের নির্মাণাধীন সর্বাধুনিক স্টেশন আইকনিক বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে ২০ শতাংশ। বনাঞ্চলের ভেতরে হাতি চলাচলের জন্য ২টি আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। ওভারপাস তৈরির কাজও চলছে দ্রুততার সঙ্গে।

করোনার কারণে কাজ বন্ধ না থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাজ শেষ হতো বলে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, নানা জটিলতার কারণে এখনও সম্পূর্ণ জমি অধিগ্রহণ করা যায়নি। এ ছাড়া ২০২০ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও করোনার কারণে কাজ শেষ হতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগবে। করোনার প্রকোপ না হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাজ শেষ হতো।

মেগা প্রকল্পের মধ্যে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটিও অন্যতম। এ প্রকল্পের কাজও করোনার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে। ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পের কাজের মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যেও শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কারণ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৬৯ শতাংশ। বাকি ৩১ শতাংশ কাজ এখনও শেষ হয়নি। করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় ২০২১ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

নির্মাণকাজ শেষ করতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া অন্য ৬টি প্রকল্পও করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে না।

করোনায় চট্টগ্রাম বিভাগে আয় কমেছে অর্ধেক
শুধু প্রকল্প নয়, করোনার কারণে ২০২০ সালে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগে আগের বছরের চেয়ে আয় কম হয়েছে ৯৬ কোটি ৫২ লাখ ১৭ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের আয় যেখানে ২৩২ কোটি ৬৭ লাখ ৭২ হাজার। সেখানে ২০২০ সালের করোনার বছরে আয় ১৩৬ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৯৬ কোটি ৫২ লাখ ১৭ হাজার টাকা কম।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ২০১৯ ও ২০২০ সালের আয় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে যাত্রী পরিবহন খাতে আয় হয়েছে ১৪০ কোটি ৪০ লাখ ২২ হাজার টাকা, পার্সেল পরিবহন করে ৫ কোটি ১২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, বিভাগ পর্যায়ে মালামাল পরিবহন থেকে আয় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা, বন্দরের মালামাল পরিবহন করে ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা ও বিবিধ আয় হয়েছে ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

আর ২০২০ সালে যাত্রী পরিবহন খাতে আয় ৫১ কোটি ১০ লাখ ৮২ হাজার টাকা, কুইন্টাল পরিবহন থেকে আয় ২ কোটি ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, পার্সেল থেকে আয় ২ কোটি ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, বিভাগীয় মালামাল পরিবহন করে আয় এক কোটি ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, বন্দরের মালামাল পরিবহন করে আয় ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও বিবিধ আয় দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা।

গত ২০২০ সালে মহামারী করোনা সংক্রমণ শুরু হলে টানা ৬৭ দিন বন্ধ ছিল রেলওয়ের যাত্রী পরিবহন। মূলত এ কারণে যাত্রী পরিবহন থেকে আয়ের ধস নেমেছে। এ সময় রেলপথে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক ছিল। যার ফলে মোটামুটি ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে রেলওয়ে। তবে যাত্রী পরিবহন বন্ধের সময় আরও বেশি পণ্য পরিবহন করার সুযোগ ছিল বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী বলেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে আয় কম হওয়ার কারণ করোনা। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কারণে অনেকদিন যাত্রী পরিবহনও বন্ধ ছিল, তাই ২০২০ সালে আয় কম হয়েছে। তবে আমরা নতুন বছরে আয় বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।