কোনো মেয়ে টিশার্ট পরলেই কামভাব জাগ্রত হয়ে যাবে!

মালবিকা শীলা

ভাগ্যিস প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সসম্মানে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে ভেগে আসতে পেরেছিলাম! অনার্সে পড়ার সময় মৈত্রী হলে আমরা অনেকেই টিশার্ট, মিডি, জিন্স, স্কার্ট পরতাম। মাস্টার্সে পড়ার সময় ফয়জুন্নেসা হলে আমি আর আমার রুমমেইট দোলন দুজনেই স্লিভলেস কালো গেঞ্জি আর জিন্সের শর্টস পরতাম! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, মেয়েরা হলে পায়জামা টিশার্ট পরতে পারবে না, কারণ এটা অশালীন পোশাক! বাহবা সাবাস!
আমরা টিশার্ট, জিন্স, স্কার্ট পরে বাইরে চায়ের দোকানে গিয়ে চা খেতে খেতে আড্ডা দিয়েছি ঘন্টার পর ঘন্টা। বাই দ্য ওয়ে, তখন মার্কেটে ধর্ষণ কিন্তু আজকের মতো এতো হট আইটেম ছিলো না! যতো বিধিনিষেধ বাড়বে, ততো আকর্ষণ বাড়বে। ততো বাড়বে যৌন হতাশা। যৌন অবদমনের শিকার হবে শিশু থেকে গরু ছাগল অব্দি! প্রমাণ পাচ্ছেন না!

রোজার দিনে ঘরের মহিলারা রোজা রেখেও ইফতারি বানান না? কই কেউ তো জিহ্বার পানি ফেলতে ফেলতে টুপ করে একটা পেঁয়াজু বা এক খাবলা ছোলা খেয়ে ফেলেন না! এর কারণ কি? কারণ হচ্ছে এঁরা সংযম জানেন। কিন্তু ধর্ম রক্ষার নামে কিছু অসভ্য লোকজন রেস্টুরেন্ট বন্ধ করতে লাঠিসোটা নিয়ে ছোটে! খাবার দেখলেই যদি আপনার রোজা ছুটে যায় সেটা কার দোষ! এদেরকে আসলে ঘাড় ধরে দিনমজুরি করতে দেওয়া দরকার! রোজা রেখে ঠাঠা পড়া রোদে একদিন রিক্সা চালিয়ে দেখেন কেমন লাগে! অসুস্থ মানুষ, শিশু, অন্য ধর্মের মানুষ অথবা কেউ রোজা না রাখতে চাইলে তাদেরও আপনারা বাধ্য করবেন না খেয়ে থাকতে! সত্যিই আপনারা প্রমাণ করে ছাড়লেন, জোর যার মুল্লুক তার! ঘরের মধ্যে কে কি করবে, কে কি পরবে এগুলোও যদি কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেয় সেটা কি অধিকার হরণ করা নয়!

হলের ভেতর ছেলেরা খালিগায়ে লুঙ্গি অথবা শর্টস পরে থাকতে পারলে মেয়েরা কেন টিশার্ট পায়জামা পরে থাকতে পারবে না! গরমের দেশে ঘরের মধ্যেও কি একটু রিল্যাক্সড পোশাক মেয়েরা পরবে না! যদি ব্রা প্যান্টি পরতো তাহলেও বুঝতাম আমাদের কালচারের সাথে সেটা বেমানান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মফস্বলের অনেক মেয়েই হয়তো পারিবারিক, সামাজিক কারণে নিজের বাড়িতে টিশার্ট পরতে পারে না। হলে এসে ওরা একটু নিজের মতো করে থাকে। এখন সেখানেও যদি এরকম হাস্যকর বিধিনিষেধ আরোপ করেন তাহলে তো বিপদ! যারা চায় তারা বোরখা, হিজাব, আলখাল্লা, পাগড়ি, জোব্বা পরুক, আর যারা চায় তারা টিশার্ট, পায়জামা পরুক না!

আপনাদের সমস্যা আসলে আপনারা নিজেরাই, সংযম নামের কোনো বালাই আপনাদের মধ্যে নাই! কোনো মেয়ে টিশার্ট পরলেই কি তাকে দেখে আপনার কামভাব জাগ্রত হয়ে যাবে! আধুনিকতা মানে কিন্তু টাইট বা খোলামেলা কাপড় পরে উচ্ছৃঙ্খলতা নয়। আধুনিকতা হচ্ছে আপনার দেখার যে দৃষ্টিটা সেটা। যার যেটা মর্জি সে পরুক, সেটা দেখে আপনার চুলকানি হলে সমস্যাটা আসলে কার বলুন তো! এরকম সেক্সুয়ালি ডিপ্রাইভড পার্ভার্টেড লোকদের কোনো ন্যুড বিচে ছেড়ে দিলে তো তাদের চোখ কোটর ছেড়ে সূর্যস্নানরতা মেয়েদের পিছুপিছু ওদের ঘর পর্যন্ত চলে যাবে!

সব কিছুতে আপনাদের ক্ষমতার পেশি প্রদর্শন না করলেই কি চলে না! ক্ষমতা থাকলে, যাদের টিশার্ট দেখে চুলকানি হয় তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দেখান! অপরাধের মাত্রা পোশাকে পরিবর্তন আনলে কমবে না। পরিবর্তন আনতে হবে আপনাদের পচে যাওয়া মগজে, আপনাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া অসভ্য দৃষ্টিতে!

লেখকঃ কানাডাপ্রবাসী সংগীত শিল্পী

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, ২৪ আগস্ট ২০১৭

এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। লেটেস্টবিডিনিউজ.কম -এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)