স্তন নিয়ে বর্বরতা!

আমার কিছু একান্ত জখম আছে। এই বিষয়গুলো হয়তো আমার পরিচিত মানুষদের বিব্রত করতে পারে তাই চুপ থাকতে হয়। আজ যে বিষয়টি নিয়ে লিখতে যাচ্ছি তা হয়তো লেখা হতো না যদি না একটি ভিডিও দেখতাম।

(https://uk.news.yahoo.com/call-breast-ironing-criminal-offence-003816683.html?soc_src=social-sh&soc_trk=fb)

সত্যি বলতে কি ভিডিওটি আমি পুরো দেখতেও পারিনি। আমার জখমের থেকে এই বিষয়গুলো মানুষের জানা দরকার এবং এ ধরণের রিচুয়াল বন্ধ হওয়া দরকার।

আফ্রিকার মেয়েদের খৎনা করার বিরুদ্ধে সোচ্চার আমরা। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না বাচ্চা মেয়েদের “ দুধ গালা” বিষয়টি কী। তবে ব্যাপারটির সাথে আমাদের গ্রামের মা দাদীরা অনেক পরিচিত। শহরেও এরকম কম হয় না। যারা ব্যাপারটি বুঝছেন না, তাদের জন্য সংক্ষেপে বলা যায়, মেয়েদের স্তন ছোট রাখতে বা গ্রোথ কমাতে স্তন ফোঁড়ার মতো গেলে ফেলে দেবার মতো একটা ব্যাপার এদেশে এখনও প্রচলিত আছে। হয়তো কম, কিন্তু আছে।

ছোট ছোট বাচ্চা মেয়েরা বড় হলে তো মনে করতে পারে না। তাই আডোলেসেন্স পিরিয়ডেই এই কাজ করা হয়। কী ভয়ানক যন্ত্রণা হয় বাচ্চাটার। এটার কি ধর্মীয় ভিত্তি আছে? মেডিকেল? না। শুধুমাত্র বুক বড় হওয়ার ভয়ে মা বা অভিভাবক এই কাজ করান।

খুব কি লাভ হয়? আমার মা শিক্ষিত হয়েও শুনেছি এই কাজ করিয়েছিলেন। প্রসেসটা ঠিক না ভুল সে বিতর্ক আছে আর হয়তো এ কারণেই আমার ইনভারটেড নিপল হয়ে গিয়েছিল। আমার বাচ্চা জন্মের পর অনেকদিন দুধ খেতে না পেয়ে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছিলো।

মা যখন ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে দুধ দিতে পারে না, আর বাচ্চা সারারাত ক্ষুধায় কাঁদে, সেই কষ্ট মা ছাড়া আর কারো অনুভব করা সম্ভব না। কি কষ্ট করেছি আমি আর আমার বাচ্চা তা সৃষ্টিকর্তা দেখেছেন। আমার মা আরও একটা কাজ করতেন। জিনিসটা অনেকটা জাপানী মেয়েদের লোহার জুতা পরানোর মতো।

যে বয়সে মেয়েরা ব্রা পড়া শুরু করতো, আমার মা আমাকে টাইট ব্লাঊজ বানিয়ে দিতেন নীচে পরার জন্য। সেটাতে সামনেটা সপাট থাকতো। দম নেয়াই মুস্কিল। এতে লাভের থেকে ক্ষতিই হয়েছে। বেঢপ গড়ন নিয়ে বেড়ে উঠেছি।

আজ আমার মা নেই। আমার মা তার মায়ের প্রভাবে হয়তো এমন করেছিলেন। তাই আমি এভাবে বলতে চাইনি। কিন্তু, বললাম এটা ভেবে যে, আমার কষ্ট হয়তো শুধু আমার না। আরও অনেকেই পেয়েছে। নারীর স্তন খুব স্বাভাবিক একটি অংশ। বয়ঃসন্ধিতে এটি অন্যান্য অংশের মতো হরমোনের প্রভাবে বাড়বে।

মা মনে করে, মেয়ে বয়সের আগেই বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু শরীরের রসায়ন একেকজনের একেক রকম। এই মধ্যযুগীয় বর্বরতা যদি কোথাও হয়, আসুন না, একত্র হয়ে বাধা দেই। অন্তত, জখমগুলোয় একটু হলেও মলম পড়বে।  সূত্র: উইমেন চ্যাপ্টার

বাংলাদেশ সময় : ১৬৪৮ ঘণ্টা, ১৮ অক্টোবর,  ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ