কে বলেছে ভূত নেই? আসল ভূতদের চিনে নিন

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
ভূত বলে কিছু আছে কি না এই বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও ভূতের ভয় বলে যে কিছু একটা আছে তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। ভূত না থাকলেও ভূতদের জন্য একটা দিন আছে।

ভূতে বিশ্বাস করে না এমন এক যুবক বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছে। সে গভীর রাতে শ্মশানে যাবে। শ্মশানের কিছু একটা হাতে করে নিয়ে এসে বন্ধুদের দেখাবে। যেই কথা সেই কাজ। বুক ভরা সাহস নিয়ে গ্রামের শ্মশানে চলে গেল। গভীর রাত। চারদিকে জোনাকির আলো। হঠাৎ হঠাৎ অচেনা পাখির ডাকও তাকে ভয় ধরাতে পারলো না। শ্মশানে গিয়ে দেখে তার মতো আরেক যুবক শ্মশানের প্রাচিরে বসে পা দোলাচ্ছে। যুবক ঐ যুবকের পাশে গিয়ে বসল। তার দেখাদেখি পা দোলাতে দোলাতে বলল, শ্মশানে ভূত থাকে বন্ধুদের এই ধারণা মিথ্যে প্রমাণ করতে আমি এখানে এসেছি। নিশ্চয় আপনিও কারও সাথে বাজি ধরে এসেছেন? আপনিও বিশ্বাস করেন, শ্মশানে ভূত প্রেত থাকে না?

আগে থেকে বসে থাকা সেই যুবক বলল, একদম ঠিক বলেছেন। ত্রিশ বছর আগে আমাকে পোড়ানো হয়েছে। কই এই ত্রিশ বছরে একটা ভূতকেও তো দেখলাম না?

বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভূত আছে কি না এই বিতর্ক চলতে পারে। বাংলাদেশে কিন্তু একদম চলে না। কারণ আধুনিক যুগেও আমাদের দেশে ভূতের প্রাদুর্ভাবের শেষ নেই। ভাবছেন আমাদের ভূত কারা? আসুন জানি আমাদের আরও কিছু ভূতের খবর।

প্রশ্নফাঁসভূত:
এত লেখালেখি, এত আন্দোলন, কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রশ্ন প্রণয়নের পরও পরীক্ষার আগে টাকা পয়সা নিয়ে প্রশ্ন বিতরণ করে কে? বিশেষ ছাত্রদের মেইলে, মেসেঞ্জারে প্রশ্ন পাঠায় কারা? তারা আমাদের প্রশ্নফাঁসভূত।

অদ্ভুতভূত:
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ টিএসসিতে রাত আটটার পর কেউ অবস্থান করতে পারবে না মর্মে আইন জারি করে কর্তৃপক্ষ। রাত আটটার পর টিএসসি খালি করে কাদের থাকার ব্যবস্থা করার জন্য এই আইন জারি হয়? নিশ্চয় ভূতেদের? নাকি যারা আইন করে তারাই ভূত? গবেষণার বিষয়।

প্রশ্নপত্রভূত:  
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধর্মের মানুষ পরীক্ষা দেয়। সেই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নে কোন ধর্মীয় গ্রন্থ সেরা সেই প্রশ্ন করে বসে, এরা কারা? প্রশ্নপত্রভূত?

ডিবিভূত:  
আইন যাদের কাঁধে। সাধারণ মানুষকে যারা রক্ষার মহান দায়িত্বে। সেই আইনের হাতে যখন সাধারণ মানুষ অপহৃত হয় এবং ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে রক্ষা পেতে হয় তখন গর্ব করে বলতেই হয় এরাই আমাদের ভূত।

গুজবভূত: 
নোবেল কমিটি শান্তিতে নোবেল পাওয়ার জন্য কারা মনোনয়ন পায় সেটা ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখে। সেই গোপন তথ্য সংবাদ আকারে প্রকাশ করে যারা তারাই তো আমাদের গুজবভূত। এরা কয়েকদিন পর পর কোন কোন তারকার মৃত্যুর গুজব রটায়। আবার তারাই সংবাদ দেয় অমুক তারকার মৃত্যুর গুজবটি গুজব ছিল।

দ্রব্যমূল্যভূত:
এককেজি পেঁয়াজ কিনলে আর বাজার করার টাকা থাকে না। ব্যাগ ভর্তি টাকায় ব্যাগ ভর্তি চাল কেনা যায় না। দ্রব্যমূল্যকে পাগলা ঘোড়ার মতো উর্ধমূখী চালায় কোন ভূত?

নির্যাতনভূত:
চুরির অপবাদে শিশু পিটিয়ে হত্যা, প্রেম-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় চাপাতি দিয়ে কোপানো, গৃহকর্মীর গায়ে গরম তেল ঢেলে ঝলসে দেওয়ার মতো কাজগুলো কোনো মানুষের দ্বারা সম্ভব? নিশ্চয় এগুলো ভূতেদের কাজ।

ধর্ষণভূত:
ঘরে, বাইরে, রাস্তায়, স্কুলে, বাসে। ছোট, বড়, শিশু নারী কোথাও নিরাপদ নয়। মানুষের আদতে ভূত ঘুরে বেড়ায় বলেই তো এই অবস্থা। কোন মানুষের দ্বারা এমন জঘন্য কাজ তো আর সম্ভব না।

***কলাম বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। লেটেস্টবিডিনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ২৮ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ