ফ্লাইওভার প্রকল্পগুলো বিষফোঁড়ায় পরিণত হবে

স্থপতি ইকবাল হাবিব  
গতকাল (২৮ অক্টোবর) ছিল মৌচাক ফ্লাইওভার উদ্বোধনের দিন। সে কারণে মানুষের আগ্রহ তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। তার পর এটি একটি অনন্য ফ্লাইওভার। যার উপর সিগন্যালিং সিস্টেম আছে। পৃথিবীর আর কোথাও সিগন্যালিং সিস্টেম নেই। তার উপর ড্রাইভাররাও ছিল কনফিউজড, এসব কারণে হয় তো যানজট বেশি হয়েছে। আবার অনেকে প্রয়োজন ছাড়াও গিয়েছেন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, ফ্লাইওভার অমোঘ অস্ত্র নয়, এটি বারবার বলেছি। সরকারের সব নথিপত্র বলেছে, যতগুলো পরিবহন কৌশলপত্র ট্রান্সপোর্ট স্টাডি হয়েছে অর্থাৎ পলিসি তৈরি হয়েছে; প্রত্যেকটিতে বলা হয়েছে। সেগুলো সরকার জেনে না জানার ভান করলে তো কিছু করার নেই। এ শহরের প্রকৃতি পৃথিবীর যে কোনো দেশের মতো নয়, যেখানে ৪৪ হাজার মানুষ প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে। এ রকম একটা শহরে আমাদের পথচারী প্রাধান্যতা এবং বাস ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টের অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। নিচে যে সড়ক, তার ঠিক মাঝখানে তিন ভাগের এক ভাগ জায়গা নষ্ট করে বড় বড় পিলার করে এ রকম একটি ফ্লাইওভার প্রকল্প করলেন। সেটি মূলত প্রাইভেট কারকে ধারণ করবে। যে প্রাইভেট কারে চলাচলে অংশিদারিত্ব মাত্র ৮ থেকে ৯ শতাংশ।

অর্থাৎ ৮ থেকে ৯ শতাংশ মানুষকে আপনি রিলিফ দেয়ার জন্য ফ্লাইওভার করার পর কতটা যানজটমুক্ত হবে, এটা বলাই বাহুল্য। মনে রাখতে হবে, এ প্রকল্প করার আগে আমাদের মানুষের চলাচলের যে সমীক্ষা, কোন দিক থেকে মানুষ কোন দিকে যাবে, প্রাক-সমীক্ষাও এ প্রকল্পে করা হয়নি। ফলে একটা হযবরল অবস্থা যে তৈরি হবে, এটাই স্বাভাবিক। ট্রাফিক ইনপেক্ট এসেসমেন্ট এ প্রকল্পে যুক্তই করা হয়নি। একটা কথা পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে, আপনি হঠাৎ করে একটি আধুনিক প্রযুক্তি মাঝখানে আনলে একটি গোটা শরীরের সমস্যার সমাধান হবে না।

অর্থাৎ একটি গাড়ি ফ্লাইওভার থেকে নামার পর কোন দিকে যাবে, সে পথ পরিষ্কার আছে কি-না? যদি একটু সহজ করে বলি, এ গাড়ির বিভিন্ন দিকে যাত্রাকে বলে করিডোর, এ করিডোরগুলোর সার্বিকতা সম্পূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ। যদি টোটাল বিষয়টিকে পরিকল্পনা না করেন, ফ্লাইওভারে নামার জায়গাতে অবশ্য জ্যাম হবে।

মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে প্রধানমন্ত্রী বাস ভবনের সামনে নামেন নিয়মিত জ্যাম পাবেন, একই অবস্থা যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারেরও। ঢাকা ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সে দায়িত্ব পালনে তারা পেশাজীবীদের সংযুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা এখন ৭০ জনের একটি সংগঠনে পরিণত হয়েছে। সার্বিকতাহীন ও সম্বন্বয়হীন এ প্রকল্পগুলো বিষফোঁড়ায় পরিণত হবে, এটি সময়ের ব্যাপার মাত্র। কৌশলপত্র তৈরি করবেন একটি, কাজ করবেন অন্যটি, তা তো হবে না। প্রাইভেটকারকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে দেয়ার চেষ্টা করলেন। যানজট কমানোর কোনো সুযোগ নেই।

পরিচিতি : নগরবিদ
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : খন্দকার আলমগীর হোসাইন
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ৩০ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/সাদ