মুসলিমদের কোনো দাম নেই মিয়ানমারে

মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্য এলাকায় বাস করেন আব্দুল আজিজ। ঘটনার দিন তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে বের হয়েছিলেন। কিন্তু পথেই তাকে ধরে নিয়ে যায় দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাকে ধরেই চোখ বাঁধা হয়। এরপর তাকে একটি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় অচেনা একটি জায়গায়। তাকে রাখা হয় একটি গোয়ালঘরে। যেখানে ছিল আরো অনেক রোহিঙ্গা।

সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত আব্দুল আজিজ সেদিনের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মিয়ানামারে মুসলিমদের কোনো দাম নেই এবং সেখানে মুসলিমরা পানি চাইলেও তাদের দেয়া হয় না।
তাকে যেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল সেখানে বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে আব্দুল আজিজ এমনটাই জানতে পারে। পরে তিনি সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন একটি বিদেশী গণমাধ্যমের কাছে। তুলে ধরেন সেদিনের পরিস্থিতির কথাও।

তিনি জানান, সেদিন ছিল বুধবার। তিনি বিকেলে নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাচ্ছিলেন। পথে তাকে কিছু বুঝে ওঠা আগেই চোখ বেঁধে গাড়িতে তোলা হয়।

পরে খুলে দেয়া হলে তিনি নিজেকে একটি গোয়াল ঘরের মধ্যে আবিস্কার করেণ। তবে তার সঙ্গে আরো রোহিঙ্গা ছিল বলে জানান তিনি।

আজিজ বলেন, দেখলাম ঘরভর্তি মানুষ। আমার মতোই তাদেরকেও ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে আমাদেরকে নিয়ে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে ।যখন বেঁধে রেখেছিল তখন দুইজন পাহারা দিয়েছে, কারোর বের হওয়ার সুযোগ ছিল না ।

তিনি বলেন, প্রচন্ড মারধোর করে আমাকে। তারা মিয়ানমারে ভাষায় বলছিলো-লো কালা অর্থাৎ তোরা আমাদের দেশী না, তোরা বাঙালি, তোরা ওখানেই চলে যা। আমার সামনে কয়েকজনকে জবাই করছে আবার কাউকে কাউকে গুলি করে মেরেছে।

তিনি বলেন, গুলি মারার পর তখনো যদি কেউ নড়তে থাকে তাহলে তাকে জবাই করে দেয় তারা। পাহারাদাররা যখন দরজা থেকে সরে গেছে তখন তাদের অবস্থান দেখে আমি পালিয়ে আসি । আমাকে ধরে নিয়ে গেছিলো আসরের সময় আর আমি পালিয়ে আসি এশার সময়। আমি যখন ওইখান থেকে বের হয়ে আসি তখন যাদেরকে তখনো হত্যা করেনি তাদের সবার হাত পা বাঁধা ছিলো। আমি যখন বাড়ি ফিরে আসি তখন দেখি আমার ঘর আগে যেরকম ছিল সেরকম আর নেই । আমার বাড়ি বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছে নাকি ম্যাচের আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে সেটা আমি জানি না কিন্তু আমার প্রতিবেশীরা বলেছে বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছে ।

আজিজ জানায়, এরপর থেকে তার মা বাবার সাথে দেখা হয়নি। এমনকি বাংলাদেশে এসেও তাদের খোঁজ পাননি তিনি।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ওখানে মুসলিমের কোনো দাম নাই। খাবার পানি দেয়া হয় না। ভয়ে আতঙ্কে আমার গলা শুকিয়ে আসছিল।

বন্দি অবস্থায় দুই আড়াই ঘণ্টা ছিলাম তখন অন্যদের জিজ্ঞাসা করেছি এখানে কোন খাবার পানি দেয় কিনা। তারা বলেছে কোন খাবার বা পানি দেয় না।

বাংলাদেশ সময় : ১৪২৬ ঘণ্টা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ