নারায়ণগঞ্জে প্রস্তুতি অনেক, সংকট মাস্ক-গ্লাভস-পিপিইর

করোনাভাইরাসের কারণে নারায়ণগঞ্জে দুটি সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় আলাদা করে ‘আইসোলেশন ইউনিট’ খোলা হয়েছে। সেখানে মাস্ক ও গ্লাভস থাকলেও পিপিইর সংকট রয়েছে। আর শহরের সরকারি হাসপাতালে গ্লাভস, মাস্ক ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) নেই।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের নবনির্মিত জুডিশিয়াল কোর্ট ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ‘জেলা করোনা কোয়ারেন্টাইন সেল’ খোলা হয়েছে। সেখানে বেডসহ সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, করোনা মোকাবিলায় আগে থেকেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট খোলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ‘জেলা করোনা কোয়ারেন্টাইন সেল’ ও ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলা হয়েছে। সেখানে বেডসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোয় কোভিড-১৯ ম্যানেজমেন্টে আলাদা কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। জেলা কমিটি সবকিছু দেখভাল করবে।

সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের মণ্ডলপাড়ায় অবস্থিত ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৩১৭ নম্বর রুমে করোনাভাইরাস আইসোলেশন ওয়ার্ডে (পুরুষ) চারজনের বেড রয়েছে। অক্সিজেনের বোতল, মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশসহ সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিচতলায় পৃথক দুটি রুমে নারীদের আইসোলেশনের কেবিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে দুজন নারীকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ভিডিও কনফারেন্স ও স্থানীয়ভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে যে পরিমাণ পিপিই রয়েছে, তা দিয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব। তবে পিপিই প্রয়োজন হবে। আমরা হাসপাতালের আইসোলেশনের জন্য ওয়ার্ড নির্বাচন করেছি। প্রয়োজনে ওই অংশটুকু শুধু করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য আলাদা করে ফেলা যাবে।’

নগরের খানপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের দোতলায় মেডিসিন ওয়ার্ডের সঙ্গে দুটি পৃথক কেবিনে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। সেখানে দুজন পুরুষ ও দুজন নারীকে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে খানপুর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু জাহের বলেন, ‘আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। তবে আমাদের মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই নেই। সেগুলো এখনো সরবরাহ করা হয়নি। রোগী এলেই সেগুলো সরকারিভাবে সরবরাহ করা হবে। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে থেকে কিনে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগী আসেনি।’

গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আন্তবিভাগীয় ‘জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনকে সভাপতি এবং জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজকে সদস্যসচিব করে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত শনিবার ওই কমিটির সভা হয়েছে। ওই কমিটি ইতিমধ্যে দুই দফা সভা করেছে। ওই কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে শহরের পুরোনো কোর্ট এলাকার শায়েস্তা খান সড়কে নতুন নির্মিত নয়তলা জুডিশিয়াল কোর্ট ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় রোগীদের রাখা হবে ‘জেলা করোনা কোয়ারেন্টাইন সেলে’। এটি ৫০ শয্যার। সেখানে বালিশ, চাদর, বেড ও মশারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে বন্দর, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ শয্যার ‘আইসোলেশন ইউনিট’ খোলা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত গ্লাভস ও মাস্ক আছে। কিন্তু পিপিই সরবরাহ নেই। স্বাস্থ্যকর্মীদের স্থানীয়ভাবে নিজ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সহসভাপতি রফিউর রাব্বি বলেন, রাজধানীর পাশের নারায়ণগঞ্জ ঘনবসতিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এই জেলার ওপর দিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মহাসড়ক গেছে। এ ছাড়া নদীবন্দরও এই নারায়ণগঞ্জে। দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজনের বাড়ি এই জেলায়। তাই এই জেলায় করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রাখতে হবে। এটাকে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।

জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, করোনা মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছি। করোনা–সন্দেহভাজন রোগীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য বড় পরিসরে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি আতঙ্কিত না হয়ে জনসাধারণকে জনসমাগম এড়িয়ে চলা ও হ্যান্ডশেক করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।

প্রসঙ্গত, রোববার দুপুরে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বাংলাদেশে তিনজন করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। ওই তিনজনের দুজন ইতালিপ্রবাসী বলে জানানো হয়।
:প্রথম আলো