গাজীপুরে গৃহবধূর যৌনাঙ্গে গরম ছেঁকা, স্তন কেটে নির্যাতন

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় মরিয়ম বেগম (৩৬) নামে এক গৃহবধূর যৌনাঙ্গে গরম রডের ছেঁকা দিয়েছেন পাষণ্ড স্বামী তমিজ উদ্দিন (৫০)। ঘটনার পর স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও নির্যাতিতার দুটি স্তনের বোটা কেটে ফেলেন এবং সমস্ত শরীরে রক্তাক্ত জখম করে ওই তমিজ উদ্দিন।

জানা গেছে, গত সোমবার থেকে ঘরের ভেতর মরিয়মকে আটকে রেখে টানা চারদিন নির্যাতন করে তমিজ উদ্দিন। এ ঘটনার পর নির্যাতিতার ছেলে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি কালীগঞ্জ থানা পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে মরিয়মকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করে এবং স্বামী তমিজ উদ্দিনকে আটক করে।

এ ঘটনায় নির্যাতিতা মরিয়ম বেগম বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা (মামলা নং ৬) দায়ের করেছেন। ওই মামলায় শনিবার তাকে গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে।

আটক তমিজ উদ্দিন উপজেলার কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বালীগাঁও গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে। সে কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কের নাভানা কারখানার পাশে চায়ের দোকান করত। আর নির্যাতিতা মরিয়ম বেগম নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজৈর গ্রামের তৈয়ব আলীর মেয়ে। সম্পর্কে তারা আপন মামাত-ফুফাত ভাই-বোন ছিল।

এদিকে মরিয়ম বেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলেও অর্থের অভাবে সেখান থেকে এসে পুনরায় কালীগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর সেখানে বসেই কাতরাচ্ছেন মরিয়ম বেগম।

নির্যাতিতার মা খোস আক্তার জানান, প্রায় দেড় যুগ আগে তার ভাইয়ের ছেলে তমিজ উদ্দিনের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। বিয়ের পর তাদের সংসারে তামিম (১৭), শামীম (১৬), রামীম (১৩) ও ইয়ামিম (১১) নামের চারটি ছেলে সন্তান রয়েছে। চার সন্তান আর স্বামী-স্ত্রী মিলে বড় পরিবার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিল তমিজ উদ্দিন। তাই প্রায় চার বছর আগে স্বামীর সম্মতিতেই লেবাননে নারী শ্রমিক হিসেবে কাজে যায় মরিয়ম। সেখানে প্রায় দুই বছর অবস্থান করে দেশে ফিরে আসে। এরপর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকত। পরে অবশ্য তা মিটেও যেত। মরিয়ম ছিল তার প্রথম স্ত্রী। কিন্তু প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে সে আরও পাঁচটি বিয়ে করে। বর্তমানে প্রথম স্ত্রী ছাড়া কেউই নেই তার সঙ্গে।

তিনি আরও জানান, ঈদের একদিন পর গত সোমবার ঘরের ভেতর আটকে রেখে টানা চারদিন নির্যাতন করে তমিজ উদ্দিন। এ সময় কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই তাকেই মারতে তেড়ে আসতেন তমিজ উদ্দিন। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। কিন্তু পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ হলে বড় ছেলে তামিম গত বৃহস্পতিবার রাতে কালীগঞ্জ থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে মরিয়মকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করে এবং স্বামী তমিজ উদ্দিনকে আটক করেন।

পরে মরিয়মকে আহত অবস্থায় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। আর স্বামীকে থানায় পাঠানো হয়।

নির্যাতিতা মরিয়ম ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে হাও-মাও করে কেঁদে এই প্রতিবেদককে বলেন, তার স্বামী লোহার রড গরম করে যৌনাঙ্গ (গোপনাঙ্গ) ছাড়াও হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দেয়। এই সময় তার দুটি স্তনের বোটা কেটে ফেলে এবং সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করে জখম করে। তমিজ উদ্দিন তার চাচা আনোয়ার হোসেনের হত্যা মামলার (২০০৯ সালে হত্যা করা হয়) এজাহারভূক্ত আসামি। ওই মামলায় সে জেলও খেটেছে। কিন্তু বর্তমানে জামিনে রয়েছে বলেও জানান মরিয়ম।

স্ত্রীকে কেন নির্যাতন করা হয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের কাছে স্বামী তমিজ উদ্দিন বলেন, এটা তার পাপের প্রায়শ্চিত্য। তিনি আরও বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেলেও অর্থের অভাবে সেখান থেকে এসে পুনরায় কালীগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

কালীগঞ্জউপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক মীর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, মরিয়মকে অমানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার অবস্থা শংকটাপন্ন দেখে তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছিল।

কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান জানান, তিনি নির্যাতন এবং বিবস্ত্র অবস্থায় মরিয়মকে উদ্ধার ও তমিজ উদ্দিন আটক করা হয়েছে। তার স্ত্রী বাদী হয়ে স্বামী তমিজ উদ্দিনকে প্রধান করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। সেই মামলায় তার স্বামীকে গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে