‘এখন পুরুষরা ঘরে বা বাথরুমে লুকিয়ে সিগারেট খান, এটা বড় অর্জন’

এখন পুরুষরা ঘরে লুকিয়ে কিংবা বাথরুমে গিয়ে সিগারেট খান। এমনকি তারা এস্ট্রেও আড়ালে রাখেন। এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন বলে বারডেমের ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টাল সার্জারি বিভাগের উপদেষ্টা ডা. অরুপ রতন চৌধুরী দাবি করেছেন।

আজ সোমবার (২৩ মে) বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন সমন্বয় এর উদ্যোগে বাংলামোটরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ বিষয়ক প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এ দাবি করেন।

ডা. অরুপ নারীদের ক্ষেত্রে সিগারেট অনেক বেশি ক্ষতিকর উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে নারীদের স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্যাসিভ স্মোকিং অনেক বড় কারণ। মেয়েদের মধ্যেও সিগারেট খাওয়া একটা প্যাশন হয়ে গেছে। এছাড়া ই-সিগারেটও অনেক বেড়ে গেছে। এটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার হয়। এর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৮৪ সাল থেকে টিভিতে তামাকবিরোধী অভিযান শুরু করা হয়েছে‌। অনেক সচেতন হয় ভয়াবহতা চোখে পড়লে। ২০১৩ সালের সংসদের তামাক আইন হয়েছে। স্বামীরা ধূমপায়ী হলে মহিলারা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত বেশি হয়। যারা তামাক ব্যবহার করে তারা ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়। মুখে গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে বেশি।

উন্নয়ন সমন্বয়ের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প সহকারী শাহীন উল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উন্নয়ন সমন্বয় এর চেয়ারম্যান ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার খানম, হাবিবা রহমান খান, মনিরা সুলতানা, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, র আ ম ও উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সিটিএফকের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তৈয়বুর রহমান প্রমুখ।

আলোচনা সভায় উন্নয়ন ড. আতিউর রহমান বলেন, তামাকপণ্যে আরও বেশি কর আরোপ করতে হবে। কারণ স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। অর্থের অপচয় হচ্ছে। তাই কর আরোপ করা হলে একদিকে রাজস্ব বাড়বে, অন্যদিকে শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, যারা আয় কম করে তাদের জন্যই করা আরোপ অভিযান সফল করা দরকার।

সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার খানম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা করেছেন। তাই আমরাও তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অংশ নিয়েছি। গুলশান ধানমন্ডি প্রতিটি রেস্টুরেন্টে স্মোকিং জোন করায় তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, গুলশান ধানমন্ডি রেস্তোরাঁ এর জন্য ভরে গেছে যুবকরা তামাকে আসক্ত হচ্ছে। কিন্তু বুঝতে হবে সরকারের চেয়ে তামাক কোম্পানিগুলো শক্তিশালী নয়। অধ্যাপক ডক্টর তৈবুর রহমান বলেন তামাক ব্যবহারে শীর্ষ ১০টার মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে। ১৫ শতাংশের বেশি মানুষ তামাকপণ্যের ব্যবহার করছে। এ চিত্র কীভাবে এলো। তা দেখতে হবে। তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার।’

শামীমা আক্তার আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের গেটের সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। ধূমপান করে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যাচ্ছে। তামাকের ব্যবহার মাদকের গলিপথ। তাই এর ব্যবহারে কর বাড়িয়ে মাদক থেকে রক্ষা করতে হবে শিক্ষার্থীদের। কারণ তামাক সস্তা হওয়ায় মাদকে আসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

এ সময় আলোচকরা তামাক বন্ধ করার জন্য ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি সবচেয়ে বড় কার্যকর বিষয় জানিয়ে তামাক পণ্যের সহজলভ্যতা রোধে পরামর্শ দেন।

পরামর্শগুলো হলো- বর্তমানে তামাক পণ্যের ঘোষিত খুচরা মূল্যের ওপর যে অ্যাড-ভেলোরেম (অর্থাৎ ঘোষিত খুচরা মূল্যের শতাংশ হিসেবে) সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা আছে। তার পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই সম্পূরক শুল্ক নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি করা।

ফিল্টারবিহীন বিড়ি (২৫ শলাকার প্যাকেট) ও ফিল্টারযুক্ত বিড়ির (২০ শলাকার প্যাকেট) ঘোষিত ন্যূনতম খুচরা মূল্য যথাক্রমে ১৮ টাকা থেকে ২৫ টাকা এবং ১৯ টাকা থেকে ২০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলোর ওপর সম্পূরক শুল্ক হবে যথাক্রমে ১১ দশমিক ২৫ টাকা ও ৯ টাকা।

নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম- এই চার স্তরের সিগারেটের (১০ শলাকার প্যাকেটের) ঘোষিত ন্যূনতম খুচরা মূল্য যথাক্রমে ৩৯ থেকে ৫০ টাকা, ৬৩ থেকে ৭৫ টাকা, ১০২ থেকে ১২০ টাকা ও ১৩৫ থেকে ১৫০ টাকা করা। প্রস্তাবনা অনুসারে এগুলোর ওপর সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক হবে যথাক্রমে ৩২ দশমিক ৫০ টাকা, ৪৮ দশমিক ৭৫ টাকা, ৭৮ টাকা ও ৯৭ দশমিক ৫০ টাকা।

ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য জর্দা ও গুলের প্রতি দশ গ্রামের ঘোষিত ন্যূনতম খুচরা মূল্য যথাক্রমে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও ২০ থেকে ২৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলোর ওপর সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক হবে যথাক্রমে ২৭ টাকা ও ২৫ টাকা।