বরিশালে হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ শিশু গৃহকর্মী ২২ ঘণ্টা পর উদ্ধার

ঢাকায় চিকিৎসকের স্ত্রী অমানসিক নির্যাতনের শিকার আহত শিশু গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈ নিখোঁজ হওয়ার ২২ ঘণ্টা পর উদ্ধার হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার আশোয়ার গ্রামের বিমলের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসান জানান, শিশুটি হাসপাতাল থেকে নিখোঁজের খবর পাওয়ার পর থেকেই পুলিশ তার সন্ধান শুরু করে। পরে ওই শিশুটির কাকা পরিচয় দানকারী তপন বাড়ৈর মামা শ্বশুর বিমলের বাড়ি থেকে শিশু নিপাকে উদ্ধার করা হয়। এদিকে নিপাকে চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতালে থেকে নিয়ে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিপার গ্রামের বাড়ির পাশেই তপন বাড়ৈ নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন। তিনি সম্পর্কে নিপার চাচা হন। তিনিই নিপাকে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নির্যাতনের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে আর্থিক প্রলোভনে নির্যাতনকারীদের পক্ষ নিয়েছেন তপন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে নিপা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় বরিশালের উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মে‌ডি‌ক্যাল অফিসার ডা. মো. শামসুদ্দোহা তাওহিদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

মে‌ডি‌ক্যাল অফিসার ডা. শামসুদ্দোহা তাওহিদ জানান, বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চাচা পরিচয়ে এক ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার শিশু নিপাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু নিপার শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় এবং সে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশকে না জানিয়ে তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিতে রাজি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিপা এবং তার সঙ্গে থাকা বড় মা পরিচয়দানকারী এক নারীকে আর দেখা যায়নি।

নিপার পাশের শয্যার রোগীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সারা রাত ওই শিশুটির স্বজনদের মোবাইল ফোনে অনেক কল আসে। তারা সারারাত জেগে ছিলেন। পরে কৌশলে হাসপাতালে থেকে তারা নিপাকে নিয়ে পালিয়ে যান তার স্বজনরা।

নিপা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হয়ে মে‌ডি‌ক্যাল অফিসার তাওহিদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নির্যাতনের শিকার শিশু নিপা বাড়ৈকে উজিরপুরের উত্তর জামবা‌ড়ি এলাকার এক‌টি দোকা‌নের সামনে রেখে চলে যান ডা. রবিনের এক সহকারী। পরে খবর পেয়ে পুলিশ নিপাকে উদ্ধার করে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

নিপা জানায়, ঢাকার অর্থোপেডিক ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সি এইচ রবিনের বাসায় গত ছয় মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। শুরু থেকে রবিনের স্ত্রী রাখি দাস তাকে অমানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে লোক মারফত নিপাতে তার গ্রামের বাড়ির এলাকায় রেখে পালিয়ে যান ডা. রবিনের সহকারী।