গত দুই মাসে ব্যাপক হারে বেড়েছে রডের দাম

দেশের বাজারে গত দুই মাসে রডের দাম ১০ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের প্রতি টন রড বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ হাজার টাকায়। হঠাৎ করে রডের দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইস্পাত কারখানার কয়েকজন মালিক বলেছেন, রডের প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও বিলেটের দাম বিশ্ববাজারে বেড়ে গেছে। তা ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট ও গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যার কারণে রডের দাম বেড়েছে। নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এটি কার্যকর হলে রডের দাম আরও বাড়বে।

রাজধানীর নয়াবাজারে রডের বাজারে গতকাল দুপুরে ঘুরে দেখা যায়, বিএসআরএম, আবুল খায়ের, কেএসআরএমের মতো বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের ষাট গ্রেডের প্রতি টন রড ৫৫ হাজার থেকে ৫৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই মাস আগেও এসব রড ৪৯ হাজার থেকে ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। অন্যদিকে মাঝারি মানের, বিশেষ করে সনাতনী (ম্যানুয়েল) কারখানায় উৎপাদিত রডের দাম এখন ৫২ হাজার থেকে ৫৪ হাজার টাকা।

রহিম স্টিলের রডের ডিলার বর্ণিল স্টিল হাউস। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ইয়াকুব হোসেন বললেন, ‘কোরবানির ঈদের ১৫ দিন আগে প্রতি টন রড ৪৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আর ঈদের পর ৫৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল। ১ হাজার কমে এখন ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ব্যবসা মন্দা। কয়েক মাস ধরেই রডের দাম কিছুটা অস্থিতিশীল। স্থিতিশীল না থাকলে ক্রেতারা সাধারণত রড কম কেনেন।

মিরপুরের তালতলার মেঘনা স্টিল এজেন্সিতে গতকাল গিয়ে দেখা যায়, বড় কোম্পানিগুলোর ষাট গ্রেডের রডের দাম টনপ্রতি ৫৬ হাজার ৮০০ থেকে ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগস্টের মাঝামাঝিতে এই রডের দাম ছিল ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি। আর ৪০ গ্রেডের রডের দাম টনপ্রতি ৫০ হাজার থেকে সাড়ে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগস্টে এই রডের দাম ছিল ৪৪ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রেতা জানালেন, কোরবানির ঈদের আগে এক দফা ও পরে আরেক দফায় রডের দাম ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুনে বাজেট ঘোষণার পরপরই রডের দাম এক দফা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কোম্পানিভেদে রডের দাম হয়েছিল টনপ্রতি ৪৮ থেকে ৫২ হাজার টাকা। কারণ, চলতি অর্থবছর থেকে রডের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাওয়ায় সেটি হয়নি। তবে রডের দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন গত রাতে বলেন, ‘বাজেটের পর পাইকারি ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে রডের দাম বাড়িয়েছিলেন। আমরা মিলমালিকেরা বাড়াইনি। অবশ্য বাড়তি দাম পরে সংশোধন হয়। তবে মাস দুয়েক আগে বিশ্ববাজারে হঠাৎ করেই রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম টনপ্রতি ৪০-৪৫ ডলার বেড়ে যায়।’ তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজটের কারণে প্রতি টনে খরচ বেড়েছে ৩০-৩৫ ডলার। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে গ্যাস-সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দেড় মাস ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে গেছে। এসব কারণেই রডের দাম বেড়েছে।

মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিলেট আমদানিতে উচ্চশুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে কেউ এখন আর বিলেট আমদানি করছে না। এমন পরিস্থিতিতে দেশে বিলেটের জোগানের চেয়ে চাহিদা বেড়ে গেছে। এ জন্য বিলেটের দামও বেড়ে গেছে।

অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য, দেশের ইস্পাত কারখানাগুলো বছরে ৫০-৫৫ লাখ টন রড উৎপাদন করছে। এর মধ্যে সরকারি প্রকল্পে ৪০ শতাংশ এবং শহর ও গ্রামে ৩০ শতাংশ করে ৬০ শতাংশ রড ব্যবহৃত হয়। একটি স্থাপনার কাঠামো দাঁড় করাতে কেবল রডের পেছনে ৪০-৪৫ শতাংশ অর্থ খরচ হয়।

জানতে চাইলে বিএসআরএমের নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত গতকাল বিকেলে বলেন, দেশের ভেতরে আগে যেখানে একেকটি ট্রেইলারে ৩০-৩৫ টন পণ্য পরিবহন করা যেত, এখন ২০ টনের বেশি যাচ্ছে না। এই জন্যও রডের দাম বেড়েছে।

রানি রি-রোলিং মিলের চেয়ারম্যান সুমন চৌধুরী বলেন, বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৯০ পয়সা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। শেষ পর্যন্ত এটি কার্যকর হলে রড উৎপাদনের খরচ প্রতি টনে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়বে।

বাংলাদেশ সময় : ১৭৩০ ঘণ্টা, ১২ অক্টোবর,  ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ