আলুর বাজারঃ ফায়দা লুটছে মধ্যস্বত্বভোগী, কৃষকের মাথায় হাত

চলতি বছরে আকাশ ছোঁয়া হয়েছে আলুর দাম। এখনও সরকারের বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। রাজশাহীর বাজারে আলু কেজি প্রতি ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বাজারে দাম থাকলেও কৃষকেরা লাভের মুখ দেখেননি। উৎপাদিত আলুতে লাভের সিংহভাগই গেছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।

মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে আলু সংগ্রহ করে গুদামজাত করে। ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাতে লাভের বড় অংশই মধ্যস্বত্বভোগীরা নিয়ে যাচ্ছে। একদিকে যেমন কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, তেমনি সিন্ডিকেট করে এসব মধ্যস্বত্বভোগীই বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ধার-দেনা করে চাষ করেও লাভের মুখ না দেখায় এখন কৃষকদের মাথায় হাত।

জানা যায়, চলতি বছর দফায় দফায় বৃষ্টি ও বন্যায় রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পেঁয়াজের পর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আলুর দাম। এই দাম রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ও ঢাকায় ৬০ টাকা কেজিতে গিয়ে পৌঁছে। অতীতে কোনোদিন এত বেশি দামে আলু বিক্রি হয়নি।

রাজশাহীর কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বাজারে যে আলু ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও কৃষকরা জমি থেকে ১২ থেকে ১৩ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছিলেন। কৃষকের কাছ থেকে এই আলু মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত মৌসুমে আলুর চাষ হয়েছিল ৩৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। গাড়িতে রাজশাহীর ৩৭টি কোল্ড স্টোরেজের ৮০ ভাগ পূর্ণ হয়েছিল। এখনও বীজসহ ২০ থেকে ২৫ ভাগ আলু কোল্ড স্টোরেজগুলোতে রয়ে গেছে।

গত বছর আলুর দাম কম হওয়ায় এ বছর আগের তুলনায় কম জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। আগামী মৌসুমে রাজশাহীতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার হেক্টর। তবে আলুর দাম ভালো থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

রাজশাহীর কৃষকরা বলছেন, অতীতে কোনদিন এত বেশি দামে আলু বিক্রি হয়নি। ১৩ টাকা কেজির আলু ৫০ টাকায় বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন কোল্ড স্টোরেজ মালিক, ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা।

মধ্যস্বত্বভোগীরা সেই আলু বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে পকেট মোটা করেছে। বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সফল হচ্ছে না।

রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজারের সবজি বিক্রেতা রহমত উল্লাহ জানান, বর্তমানে আলু ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বেধে দেয়া দামে তারা কোল্ড স্টোর থেকে আলু কিনতে পারছেন না। তাই বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

গোদাগাড়ীর আলু চাষি আজিম নিহাদ বলেন, গত মৌসুমে ধার-দেনা করে ২ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করি। আলু তোলার পর ১৩ টাকা কেজিতে সব বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করেছি। বাজারে দাম বাড়ার ফলে মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের লাভ হয়েছে। কৃষকদের কাছে থেকে আলু কিনে যারা কোল্ড স্টোরেজে রেখেছিল, তারাই লাভবান হয়েছে।

পুঠিয়া উপজেলার আলুচাষি মো. রিফাত বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা আমাদের কাছ থেকে যে দামে আলু কিনে তার কয়েকগুণ দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তাদের সিন্ডিকেটের কাছে আমরা জিম্মি। এ বছর ৩-৪ বিঘায় আলুর আবাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। গত মৌসুমে অনেক ক্ষুদ্র চাষি আলুর চাষ করে লাভবান হতে পারেনি।