যুক্তরাজ্যে গেল বরেন্দ্র এলাকা নওগাঁর আম্রপালি

উত্তরাঞ্চলে ধান-চাল উৎপাদনে বৃহত্তর জেলা নওগাঁ এখন পরিচিতি পেয়েছে আমের জেলা হিসেবেও। বরেন্দ্র এলাকা জেলার সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলার মাটি এঁটেল ও দোঁআশযুক্ত হওয়ায় সুস্বাদু হয় এ অঞ্চলের আম। দেশের চাহিদা মিটিয়ে জেলার তরুণ উদ্যোক্তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আম রফতানি করে লাভবান হচ্ছেন। যুক্তরাজ্যে প্রথম চালান এক টন আম্রপালি (বারি-৩) জাতের আম গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টার ফ্লাইটে পাঠিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা নওগাঁর ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’-এর স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা।

জানা যায়, সোহেল রানা নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়ায় ১৫০ বিঘা জমিতে ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ নামের পৃথক দুটি সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। যেখানে রফতানির জন্য তিনি আলাদাভাবে ৭০ বিঘা জমিতে আম্রপালি, বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো, কাটিমন, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, মিয়াজিকিসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতের আমের বাগান গড়ে তুলেছেন। বিদেশে আম রফতানির কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়েছে। আমে যাতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে না পারে, সেজন্য প্রথমে ফ্রুট ব্যাগিং বা ওয়াটার প্রুফ কাগজ দিয়ে প্রতিটি আমের শরীর জড়িয়ে দেয়া হয়। বাগান থেকে আম রফতানির ১৫ দিন আগে থেকে গাছে কীটনাশক স্প্রে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এভাবে প্রতিটি ধাপ অনুসরণের মাধ্যমে নিরাপদ আম উৎপাদন করেছেন সোহেল রানা।

তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম চাষে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে গত বছর যুক্তরাজ্য ও কাতারে আম্রপালি এবং ব্যানানা ম্যাংগো জাতের আট টন আম রফতানি করে দ্বিগুণেরও বেশি দাম পেয়েছিলাম। এ বছর রফতানির জন্য আবারো বিভিন্ন জাতের ৫০ টন আমের চাহিদা পেয়েছি। সোমবার প্রথম চালানে এক টন আম্রপালি (বারি-৩) জাতের আম ঢাকার শ্যামপুরে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান নর্থবেঙ্গল অ্যাগ্রো লিমিটেডের মাধ্যমে সন্ধ্যা ৭টার বিমানে আমগুলো যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এ আম দেশীয় বাজারে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই আম বিদেশে প্রায় ৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারায় বাড়তি লাভ হয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ইতালি এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে আরো চার টন আম পাঠানোর চুক্তি আছে। বিভিন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এবার ৫০ টন আম রফতানির মাধ্যমে বিশ্ববাজারে নওগাঁর আমকে একটা ব্র্যান্ডিং হিসেবে পরিচিত করে কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ তরুণ উদ্যোক্তা।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) একেএম মনজুরে মাওলা বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা এবং বিদেশে নওগাঁর আমের চাহিদা বৃদ্ধির মূল কারণ এ অঞ্চলের মাটি এঁটেল ও দোঁআশ হওয়ায় আম অনেক সুস্বাদু হয়। বিদেশে নিরাপদ আম রফতানির লক্ষ্যে চলতি মৌসুমে জেলার ৮০ জন চাষীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে বেশকিছু চাষীর সঙ্গে রফতানিকারক কোম্পানিগুলোর চুক্তি হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ চাষীরা নিরাপদ পদ্ধতিতে আম চাষ করেছেন। তাদের মধ্যে সোহেল রানা নামের এক চাষী তার বাগান থেকে বিদেশে আম্রপালি আম পাঠিয়েছেন। এটি চলতি বছর নওগাঁ থেকে বিদেশে আম রফতানির প্রথম চালান। চলতি মৌসুমে নওগাঁ থেকে ১০০ টনেরও অধিক আম রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে।

Scroll to Top