এক বছরে খেলাপি ঋণ বাড়লো ২৫ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশের দেশের ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। আর্থিক খাতের এ বিষফোঁড়ার জ্বালা কমাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ফল তেমন মিলছে না।

গত সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ।

অবশ্য বছরের চার প্রান্তিকের মধ্যে প্রথম দুই প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বাড়লেও শেষ দুই প্রান্তিকে কিছুটা কমেছে।

এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়ে ২০২৩ সাল শুরু হয়। মার্চে এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) খেলাপি ঋণ বাড়ে ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। পরের প্রান্তিক জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) খেলাপি ঋণ বাড়ে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।

তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এসে খেলাপি হওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমে। আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৬৪২ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়।

তবে শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বেশ বড় অঙ্কের খেলাপি কমে। অঅগের প্রান্তিকের চেয়ে এই তিন মাসে ৯ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা কমে যায়।
সার্বিক হিসাবে পুরো বছরে (২০২৩ সালে) ২৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

খেলাপি ঋণ কমাতে গত ৩-৪ বছরে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ পরিশোধের সুবিধার্থে ঋণ গ্রহীতাদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

মহামারি করোনার সময়ে ২০২০ ও ২০২১ সালে ঋণ পরিশোধে পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হয়েছিল। গ্রাহককে ঋণ শোধ না করেও ঋণখেলাপি তকমা থেকে মুক্ত রাখার সুযোগ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কম সুদে ঋণ নেওয়া ও ঋণ পরিশোধে ছাড় ছিল ২০২২ সালেও। গেল বছর ঋণের কিস্তির অর্ধেক পরিশোধে ছিল বিশেষ ছাড়।

এমন সব সুযোগের পরও ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছেন না অনেক ঋণ গ্রহীতা। এ কারণে নানা উদ্যোগ নিয়েও খেলাপি ঋণ কমাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে খেলাপিদের বিশেষ ছাড় বন্ধ না হলে খেলাপি ঋণ কমবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে ঢালাওভাবে সুবিধার কারণে ব্যাংকের পাশাপাশি গ্রাহকও বিপদে পড়বে।

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক সেক্টরে প্রধান সমস্যা করপোরেট গভর্ন্যান্স এবং খেলাপি ঋণ। তবে সেটা কমাতে ঢালাওভাবে ছাড় দেয়া ঠিক হবে না। বরং খেলাপি দূর করতে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রহীতা ও দাতার ক্ষেত্রে একইভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে।

অর্থনীতি বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া কোনো মতেই কাম্য নয়। এটি বাড়লে ব্যাংক খাত নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্ন ওঠে। এতে আমানতকারীদের অর্থের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পাশাপাশি জমানো টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়।

Scroll to Top