Fire

জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি, বছরে ৪৬ কোটি ডলার সাশ্রয়

গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানোর পরিবর্তে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া গেলে বাংলাদেশ বছরে ৪৬ কোটি ডলার সাশ্রয় করতে পারবে। এ পদক্ষেপ বাংলাদেশের ব্যয়বহুল আমদানিনির্ভরতা কমানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

জ্বালানিবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল অ্যানালিসিসের (আইইইএফএ) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি গতকাল সোমবার আইইইএফএর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

দেশের ক্রমবর্ধমান এলএনজির চাহিদা হ্রাসের লক্ষ্যে পরিচালিত এ গবেষণায় ৫১টি শিল্প-কারখানার প্রায় ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ১২৪টি গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটরের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে।

বাংলাদেশের জ্বালানি খাতবিষয়ক আইইইএফএর প্রধান বিশ্লেষক এবং গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক শফিকুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদায় অস্থিতিশীল জ্বালানি এলএনজির ওপর নির্ভরশীলতা মাত্রাতিরিক্ত বাড়লে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো ঝুঁকিতে পড়বে।’

আইইইএফএর গবেষণায় আমদানি করা এলএনজির সঙ্গে বাংলাদেশের অনিশ্চয়তাপূর্ণ সম্পর্ক এবং একসময়ের সাশ্রয়ী জীবাশ্ম জ্বালানি গ্যাস কিভাবে দ্রুত অর্থনৈতিক ঝুঁকি হয়ে উঠল তার চিত্র ফুটে উঠেছে।

গবেষণায় বলা হয়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ যখন সাশ্রয়ী দামে এলএনজি আমদানি শুরু করে, তখন তা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছিল।

কিন্তু এক বছরের মাথায় কভিড-১৯-এর প্রকোপ শুরু হলে এলএনজির সরবরাহ-শৃঙ্খল (সাপ্লাই চেইন) বিঘ্নিত হয়। এরপর ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম এক লাফে অনেক বেড়ে যায়। এটি দেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। 

এই প্রতিবেদনের গবেষক বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা করা হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত অস্থিতিশীলতা, স্থানীয় মুদ্রার দরপতন এবং তার আর্থিক অভিঘাত মোকাবেলার বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়নি।

বিভিন্ন খাতে গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখা নিশ্চিত করতে আমদানি করা গ্যাসের ওপর নির্ভর করতে হয়। গ্রিড এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ঠিক রাখতেও প্রয়োজন এলএনজির।’

শফিকুল আলমের মতে, গ্যাসভিত্তিক ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির অদক্ষ ব্যবহারের কারণে বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়তি গ্যাস খরচ হয়। গত দশকে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় দক্ষতা ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫.৩৮ শতাংশে উন্নীত হলেও এই খাতে জ্বালানি দক্ষতা আরো বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।

৪৫.২ শতাংশের দক্ষ জেনারেটর এরই মধ্যে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তাই অধিকতর দক্ষ জেনারেটর ব্যবহার করা গেলে গ্যাস খরচ কমানো সম্ভব।

অন্যদিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশই জেনারেটর থেকে নির্গত তাপ কোনো উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করে না। জেনারেটর প্রতিস্থাপনের জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রিম বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। সেই মূলধন ব্যয় উঠে আসতে দেড় থেকে পাঁচ বছর সময় প্রয়োজন। আর জেনারেটর থেকে নির্গত তাপ উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের জন্য করা বিনিয়োগ মাত্র এক বছরেই তুলে আনা সম্ভব।

গবেষকের মতে, সাশ্রয়ী জ্বালানির যুগ শেষ হতে চলেছে। ফলে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ শিল্প-কারখানাগুলোকে অর্থ সাশ্রয়ের দিক থেকে বেশি লাভবান করবে। জ্বালানি সাশ্রয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে দেরি করলে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যেতে পারে।

Scroll to Top