লোকসানে চামড়া খাত, ঈদে নতুন দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

একদিকে দাম পড়ছে, অন্যদিকে রফতানি বাজার হারাচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। বাড়ছে প্রক্রিয়াজাতকরণে খরচও। এরমধ্যে আবার গত কোরবানিতে কেনা চামড়ার ২০-২৫ শতাংশ রয়েছে অবিক্রীত। এমন বহুমুখী চাপে আসন্ন ঈদে নতুন করে চামড়া সংগ্রহে দুশ্চিন্তায় ট্যানারি মালিকরা। তারা বলছেন, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করতে না পারায় একক চীন নির্ভরতা ক্রমেই বাড়াচ্ছে এই খাতের সংকট। এ অবস্থায় সিইটিপি কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্জ্য শোধনে পুরো সক্ষমতা নিয়ে প্রস্তুত তারা।

কোরবানির ঈদের চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ব্যাপারী, ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কারণ বছরজুড়ে সংগ্রহ করা চামড়ার অর্ধেকের বেশি হয় এই সময়ে। ব্যাপারী ও ফড়িয়ারা বলছেন, সারা বছরে যত চামড়া সংগ্রহ করা যায়, তার অর্ধেকের বেশি পাওয়া যায় কোরবানির ঈদে। তাই এসময় চাহিদাও একটু বেশি থাকে।

তবে লাভের চেয়ে লোকসানের পাল্লাই ভারী বলে দাবি আড়তদারদের। তারা বলেন, চামড়া কাঁচামাল হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে হয়। তবে দেরি হলে চামড়ার মান নষ্ট হতে থাকায় কম দামে বিক্রি করতে হয়।

চামড়া শিল্পের লোকসানি হিসাব রয়েছে ট্যানারি মালিকদের কাছেও। তারা বলছেন, পরিবেশ দূষণের দায়মুক্তি না মেলায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চামড়া খাতের একক নিয়ন্ত্রণ এখন চীনের হাতে। ক্রমান্বয়ে দাম কমে প্রতি বর্গফুট প্রক্রিয়াজাত চামড়ার দাম দেড় ডলার থেকে নেমেছে ৪০ থেকে ৬০ সেন্টে। গত বছরের অবিক্রীত চামড়া রয়ে গেছে ২০-২৫ শতাংশ।

এবিএস ট্যানারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাম হোসেইন বলেন, বিদেশি ক্রেতারা আগের চেয়ে ২০ সেন্ট কম দিতে চাচ্ছে। প্রতি বর্গফুট প্রক্রিয়াজাত চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০-৪৫ সেন্টে।

এরমধ্যে এবার কাঁচা চামড়ার দাম বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে সরকার। যা সময় মতো সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কায় ফেলেছে তাদের। ইমাম হোসেইন বলেন, এমনিতেই ক্রেতা নেই। তারওপর বাড়ানো হয়েছে চামড়ার দাম। এটি ব্যবসায়ীদের আরও ক্ষতির মুখে ফেলে দেবে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য, গত ৪ অর্থবছরের মধ্যে মাত্র একবার প্রক্রিয়াজাত চামড়ার রফতানি আয় হয়েছে ১৫ কোটি ডলারের বেশি। ট্যানারি মালিকদের দাবি, চামড়া শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) শতভাগ কাজ না করলে সংকট বাড়বে আরও।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সহসভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, সিইটিপি পুরোপুরি চালু না হওয়ায় মিলছে না আন্তর্জাতিক এলডব্লিউজি সনদ। যা ছাড়া বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন।

সিইটিপির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দাবি, অবশেষে তরল বর্জ্য শোধনে শতভাগ প্রস্তুত তারা। ঢাকা ট্যানারি এস্টেট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম শাহনেওয়াজ বলেন, সিইটিপির ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে মেশিনের সক্ষমতা।

কোরবানিতে অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে রেশনিং পদ্ধতিতে কারখানা পরিচালনার পরামর্শও সিইটিপি কর্তৃপক্ষের।

Scroll to Top