পদোন্নতি বঞ্চনায় কৃষি ব্যাংকের কর্মচারীরা

অর্থ মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে হতাশা নিয়ে চাকরি করছেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) প্রায় দেড় হাজার পরিদর্শক ও কোষাধ্যক্ষ। তাঁদের হতাশা ও বঞ্চনার জন্য অভিযুক্ত বিকেবি নিজেও।

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকসহ সব বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মচারীদেরই পদোন্নতির শর্ত তিন বছরের চাকরি। কিন্তু ব্যতিক্রম বিকেবি। এ ব্যাংকের কর্মচারীদের পদোন্নতির শর্ত পাঁচ বছর। শুধু এই কারণে পরিদর্শক ও কোষাধ্যক্ষরা জ্যেষ্ঠতা হারাচ্ছেন, নষ্ট হচ্ছে তাঁদের চাকরির ভবিষ্যৎকালও।

পরিদর্শক ও কোষাধ্যক্ষদের প্রশ্ন, ‘বিকেবি থেকে জন্ম নেওয়া রাকাবের কর্মচারীদের পদোন্নতির শর্ত যেখানে ৩ বছর, সেখানে বিকেবির জন্য কেন ৫ বছর থাকবে?’ মন্ত্রণালয় ও বিকেবিতে বহুবার ধরনা দিলেও কেউই তাঁদের বঞ্চনার বিষয়টি আমলে নেননি।

জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান গতকাল সোমবার বলেন, ‘বিষয়টি এ রকম বৈষম্যপূর্ণ হওয়ার কথা নয়। বিকেবির উচিত শর্ত পরিবর্তনের সুপারিশ–সংবলিত একটা প্রস্তাব দেওয়া। তখন আমরা দেখব।’

বিকেবির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন পদোন্নতির জন্য ৫ বছরের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তার মতে এটা ৩ বছর হওয়া জরুরি।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২০১৪ সালের জুলাইয়ে বিকেবির জন্য নতুন জনবল কাঠামোর যে আদেশ জারি করে, বিকেবির কর্মচারীদের মতে সেই আদেশটি অস্পষ্ট, জটিল, স্ববিরোধী ও বৈষম্যপূর্ণ। আদেশের সব শর্ত পূরণ হলেও কর্মচারীদের অংশটি হয়নি।

নতুন জনবল কাঠামোতে ৫২টি পদে মোট ১৫ হাজার ৪৪২ জনবলের অনুমোদন দেওয়া হয়। মোট জনবলের অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৮ হাজার ৪৩৯ জন দ্বিতীয় শ্রেণির, যার মধ্যে কর্মকর্তা পদধারী ৭ হাজার ১৩৫ জন এবং কর্মকর্তা (ক্যাশ) পদে ১ হাজার ২৯৯ জন।

জনবল কাঠামো আদেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ছক তৈরি করে ক্রমিক নম্বর, পদের নাম, বেতন ও অনুমোদিত পদসংখ্যার তথ্য উল্লেখ করেছে। এতে পরিদর্শক ও কোষাধ্যক্ষ পদ দুটি রাখা হয়নি।

আদেশের প্রথম শর্তে বলা হয়েছে, ‘বিকেবিকে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ও কর্মকর্তানির্ভর ব্যাংক করতে পরিদর্শক ও কোষাধ্যক্ষ পদ পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত করা হবে। এ প্রক্রিয়া কার্যকর করা হবে পদোন্নতি, অবসর, মৃত্যু, চাকরিচ্যুতি ও পদ পরিত্যাগের মাধ্যমে। পরিদর্শকের পদ বিলুপ্ত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমসংখ্যক কর্মকর্তা ও কোষাধ্যক্ষের পদ বিলুপ্ত হলে কর্মকতা (ক্যাশ) পদ জনবল কাঠামোতে সৃষ্টি হবে।’

একদিকে জনবল কাঠামোতে পরিদর্শক ও কোষাধ্যক্ষ পদ রাখা হয়নি, অন্যদিকে শর্তে বলা হয়েছে পদ দুটি বিলুপ্ত করা হবে। অর্থাৎ বিলুপ্ত হওয়ার বিষয়টিই স্পষ্ট করা হয়নি আদেশে। আবার অন্য একটি শর্তে বলা হয়েছে, কর্মচারীদের বিদ্যমান চাকরি প্রবিধানমালা ২০০৮ সংশোধন করে বিলুপ্ত পদগুলোকে বাদ দিতে হবে এবং নতুন পদগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

একজন পরিদর্শক বলেন, পদ দুটি বিলুপ্ত ‘হবে’ না ‘হয়েছে’, সেটাই স্পষ্ট নয় আদেশে। কেউ মারা গেলে বা কারও চাকরি চলে গেলে অথবা কেউ চাকরি ছেড়ে দিলে যে পদ শূন্য হবে, সেই পদে নিয়োগ দেওয়া হবে একজন কর্মকর্তা—বিষয়টি নিষ্ঠুর প্রকৃতির।

এদিকে সোয়া তিন বছর পার হলেও চাকরি প্রবিধানমালা সংশোধন হয়নি বিকেবিতে। বরং এই ফাঁকে ব্যাংকটিতে নতুন নিয়োগ হয়েছে ‘কর্মকর্তা’ পদে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ওই দুই পদ থেকে পদোন্নতি দিয়েই বিকেবি পরিদর্শক ও কোষাধ্যক্ষদের ‘কর্মকর্তা’ পদে নিয়ে আসতে পারত। কারণ, প্রবিধানমালায় বলা আছে ৫০ শতাংশ পদোন্নতি ও ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে বিকেবিতে কর্মকর্তা নিয়োগ পাবেন।

তবে বিকেবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতির শর্ত ৫ বছর থেকে ৩ বছর যেহেতু এখনো করা হয়নি, তাই প্রবিধানমালার শর্তও মানা সম্ভব নয়।

বিকেবির এমডি মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন গত রাতে মুঠোফোনে বলেন, আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় তিনি বিষয়গুলো তুলবেন।

বাংলাদেশ সময় : ১৫২৮ ঘণ্টা, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ