বেড়েই চলছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ

রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েই চলছে। চলতি বছরের ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত বহুল আলোচিত রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে নয় হাজার ৭৬৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অনুমিত হিসাব কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য উঠে আসে।

বেসিক ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৬২৮টি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির পাওনা ছয় হাজার ৫৩৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১০০ কোটি বা তার চেয়ে বেশি পাওনা আছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১১। তাদের কাছেপাওনা এক হাজার ২৫৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পাওনা রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০টি। তাদের কাছে মোট পাওনা দুই হাজার ১০৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

ব্যাংকের পক্ষ থেকে কমিটির কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট তিন হাজার ২৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পাওনা ছিল। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ওই প্রতিষ্ঠান২০টির কাছে বকেয়া পাওনা তিন হাজার ২২৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করে।

ব্যাংকের পক্ষ থেকে কমিটির কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে ২০১৬ সালের ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট তিন হাজার ২৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পাওনা ছিল। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ওই প্রতিষ্ঠান ২০টির কাছে বকেয়া পাওনা তিন হাজার ২২৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে টি এন ব্রাদার্স গ্রুপ (পাওনা ৪৮১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা), হলমার্ক গ্রুপ (পাওনা ৪৭৯ কোটি ৯লাখ টাকা), ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স লিমিটেড (পাওনা ৩১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা), মুম্নু ফেব্রিক্স (পাওনা ২৩৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা)।অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (পাওনা ২১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা), জিএমজি এয়ারলাইন্স (পাওনা ১৫৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা), লীনাপেপার মিলস -১ ও ২ (পাওনা ১৩৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা), মেঘনা কনডেন্স মিল্ক্ক (পাওনা ১৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা), এপেক্সউইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং (পাওনা ১২৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা), খুলনার সোনালী জুট মিলস লিমিটেড (পাওনা ১২৬ কোটি ৮৫ লাখটাকা), এ. কে. জুট ট্রেডিং লি. ( পাওনা ১১২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা), বিশ্বাস গার্মেন্টস ইউনিট-২ (পাওনা ১০৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা),রেজা জুট লি. (পাওনা ৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা), ইস্টার্ন ট্রেডার্স (পাওনা ৯২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা), সাইয়ান করপোরেশন (পাওনা৭৬ কোটি সাত লাখ টাকা), পদ্মা পলি কটন (পাওনা ৭৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা), এজাক্স জুট মিলস লিমিটেড (পাওনা ৭৩ কোটিআট লাখ টাকা), ক্ল্যাসিক সাপ্লাইস লিমিটেড (পাওনা ৬৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা), মেসার্স নিউজ স্টাইল (পাওনা ৬৬ কোটি ৫৫ লাখটাকা) ও চট্টগ্রামের কোস্টাল সি ফুড (পাওনা ৬৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা)।

বেসিক ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৬২৮টি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির পাওনা ছয়হাজার ৫৩৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১০০ কোটি বা তার চেয়ে বেশি পাওনা আছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১১। তাদের কাছেপাওনা এক হাজার ২৫৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পাওনা রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা৩০টি। তাদের কাছে মোট পাওনা দুই হাজার ১০৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

বেসিক ব্যাংকের খেলাপি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান দি ওয়েলটেক্স লিমিটেড। তাদের কাছে পাওনা ১২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। শীর্ষ ১১টিখেলাপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরও রয়েছে ডেল্কল্টা সিস্টেমস লিমিটেড (পাওনা ১২৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা), আইজি নেভিগেশনলিমিটেড (পাওনা ১১৯ কোটি ৯৫ লাখ), বে নেভিগেশন লিমিটেড (পাওনা ১১৬ কোটি ৩৮ লাখ), ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকিংলিমিটেড (১১৩ কোটি ৮৩ লাখ), ম্যাপ পেপার বোর্ড মিলস লিমিটেড (১১৩ কোটি ৪২ লাখ), প্রফিউশন টেক্সটাইল লিমিটেড (১১১কোটি ৫৫ লাখ), মা টেক্স (১১১ কোটি ২২ লাখ), কনফিডেন্স সুজ লিমিটেড ( ১০৮ কোটি ২৯ লাখ), এ আর এস এস এন্টারপ্রাইজ১০২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। নিউ অটো ডিফাইন (১০১ কোটি ৮৭ লাখ)।

বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের যেসব শাখা ধারাবাহিকভাবে পাঁচ বছরলোকসান দিচ্ছে, তাদের তালিকা হালানাগাদ করে প্রয়োজনে এসব শাখা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে। এ ছাড়াসোনালী ব্যংকের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের নাম, মালিকের নাম ও পদবি উল্লেখ করে এবং ঋণ আদায়ের জন্য নিয়োগ করা ২০ ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের নামসহ বেসিক ব্যাংকের ৫০ কোটি টাকার ওপর খেলাপিদের তালিকা পত্রিকায় প্রকাশের জন্যসুপারিশ করা হয়েছে।

ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে অদক্ষতা,অব্যবস্থাপনা,বাছবিচার ছাড়াই ঋণ অনুমোদন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সর্বোত্তম পরিপালন এবং ঋণআদায় কার্যক্রম জোরদার না করার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এতে ব্যাংকের তহবিল ব্যয় বাড়ছে। এখনই সতর্ক ওসচেতন না হলে আগামী‌তে অনেক ব্যাংক অস্তিত্ব হারানোর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময় : ১১৫২ ঘণ্টা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ