করোনা: প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন মনিটরিং করবে অর্থ মন্ত্রণালয়

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে অর্থনীতির ক্ষতিকর প্রভাব ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক প্রণোদনা ঘোষণা করছেন। এসব প্রণোদনা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের সার্বিক বিষয় অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যৌথভাবে মনিটরিং করবে।

এজন্য গঠন করা হবে ১০ থেকে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি। প্রণোদনা প্যাকেজের মোট ব্যয়, অর্থের সংস্থান, মনিটরিং ব্যবস্থা এবং কমিটির বিষয়বস্তু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি সার-সংক্ষেপ পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সার-সংক্ষেপে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সার-সংক্ষেপ অনুমোদন দিলেই প্রণোদনা প্যাকেজের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ঠিকমত হচ্ছে কীনা তা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ প্যাকেজের অর্থ কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যাদের উদ্দেশ্য প্যাকেজ করা হয়েছে তারা এর থেকে সহায়তা পাচ্ছে কী না, কোনো ঋণ খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর থেকে কোনো ধরণের সহায়তা পাচ্ছে কীতা-তা খতিয়ে দেখা হবে।

বিশেষ করে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে এর থেকে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগকে। আর এজন্য ১০ থেকে ১৫ সদস্যর একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিতে অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এমডিদের রাখা হতে পারে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি পরিচালিত হবে। এছাড়া সরকারি সব ব্যাংকের প্রধান শাখায় প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ ছাড়ের ব্যাপারে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার ঋণ ব্যাংক-গ্রাহক ভিত্তিতে দেয়া হবে। তবে এজন্য গ্রাহককে অন্যান্য ঋণ যেভাবে পেতে হয় ঠিক সেভাবে প্রণোদনার ঋণ পেতে আবেদন করতে হবে। আবেদনের একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তা অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। আর অর্থমন্ত্রণালয় তা উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে দিবে। কমিটি আবেদন যাচাই-বাছাই করে তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। আর এর ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা হবে কারা ঋণ পাবে, আর কারা পাবেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রণোদনা বাস্তবায়নে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার। এখানে যেন দলীয়করণ বা প্রভাবশালীরা নিজেদের প্রভাব না খাটাতে পারে সেজন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠণ করা হবে।

সূত্রে জানা গেছে, প্রণোদনার ঋণ কিভাবে পরিচালনা এবং বাস্তবায়ন করা হবে তা ঠিক করতে সরকারি সব ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে এ্যাকশন প্ল্যান জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। গত সপ্তাহে পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলো এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ইতিমধ্যে এ্যাকশন প্ল্যান পাঠিয়েছে। এ্যাকশন প্ল্যানসহ সরকার যেসব প্রণোদনা দিয়েছে তার সম্পূর্ণ বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি সার-সংক্ষেপ তৈরি করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। সার-সংক্ষেপে প্রণোদনার অর্থ কিভাবে ব্যয় হবে তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। কোন কোন খাত এতে উপকৃত হবে তাও বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৈরি করা সার-সংক্ষেপে প্রণোদনা বাবদ সরকারের ভতুর্কী ও সুদ ব্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র মতে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সুদ ব্যয় খাতে ৫৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বর্তমানে সুদ পরিশোধে জিডিপি’র ২ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে। প্রণোদনার কারণে সুদ ব্যয় ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। অর্থাৎ সুদ অর্থবছর শেষে তা বেড়ে ৬২ হাজার কোটিতে ঠেকতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

এছাড়া করোনা ভাইরাসের অর্থনৈতিক ক্ষতি ঠেকাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনায় সরকারের ভতুর্কীর পরিমাণও বাড়বে। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে ৪৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। এই ৪৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকার অতিরিক্ত আরো প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লাগবে। তবে নতুন করে আরো প্রণোদনার ঘোষণা আসলে সরকারের সুদ ব্যয় এবং ভতুর্কী ও প্রণোদনা ব্যয় আরো বাড়বে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৈরি করা সার-সংক্ষেপে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে।