কাঁটাতার পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকছে বাংলাদেশের রুপালি ইলিশ

কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে অবৈধ পথে বরফে মোড়ানো বক্সবোঝাই করে ভারতে ঢুকছে বাংলাদেশের রুপালি ইলিশ। কখনো নদীপথ, আবার কখনো কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অবৈধভাবে ঢুকছে বাংলাদেশের ইলিশ।

বক্সভর্তি এসব ইলিশ নিমেষেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের সব জেলাতেই পাওয়া যাচ্ছে এ ইলিশ। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। আর সে কারণে গত বছর ৫শ টন ও চলতি বছর সম্প্রতি ১৫শ টন ইলিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। যা রাজ্যে ধাপে ধাপে ঢুকছে। কলকাতার বাজারে চরা দামে এসব ইলিশ বিক্রি হয়। এসব ইলিশের ওজন প্রায় এক কেজি ৪শ থেকে এক কেজি ৯শ’র গ্রামের মতো। এ ইলিশের কেজিপ্রতি দাম ১৫শ থেকে ১৭শ রুপি। অর্থাৎ একখানা ইলিশ কিনতে হলে গুনতে হয় প্রায় তিন হাজার রুপি মতো।

কিন্তু চোরাই পথে যেসব ইলিশ ঢুকছে সেগুলোর ওজন ৮শ গ্রাম থেকে এক কেজি। এসব ইলিশ বৈধ বাজার মূল্যের থেকেও কমে বিক্রি করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। তাই অবৈধ ইলিশের চাহিদা আকাশছোঁয়া। এমনই চাহিদা যে অগ্রিম অর্ডার দিয়েও রেখে দেন অনেকে। আর এ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে রিপোর্ট তৈরি করেছে, তাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে এখনো অব্দি রাজ্যে ইলিশ পাচারের সময় ধরা পড়েছে মোট তিন হাজার আটশ ৮৮ কেজি। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটক হয়েছেন ১৬ জন ভারতীয়।

অন্যদিকে বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীন এলাকায় ধরা পড়েছে প্রায় ৫শ কেজি ইলিশ। সবমিলিয়ে চার হাজার কেজির বেশি ইলিশ এখনো পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে পাচারকালে জব্দ করেছে বিএসএফ সদস্যরা।

বিএসএফ এক কর্মকর্তার মতে, বাংলাদেশে এ ইলিশের দাম তুলনামূলক অনেক কম। তাই অবৈধ উপায়ে সেসব ইলিশ সস্তায় কিনে এনে বেশি দামে বিক্রি করার চেষ্টা করছেএকদল অসাধু কারবারিরা।

পেট্রাপোলে কর্মরত কাস্টমসের এক কর্মকর্তা বলেন, বিপুল পরিমাণ ইলিশ পাচার রুখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইলিশ একেবারেই যে পাচার হয়নি, এমন নয়। বাংলাদেশ থেকে এপাড়ে ইলিশ এসেছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সৎ ব্যবসায়ীরা, ক্ষতি হচ্ছে রাজস্বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসএফের এক কমান্ড্যান্ট কর্তা বলেন, বসিরহাট ও বনগাঁ এ দুটি সীমান্ত দিয়ে ইলিশ ঢুকার ঘটনা বেশি। ইছামতির মাধ্যমে রাতে বিভিন্ন উপায়ে ইলিশ ঢোকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে দুই দেশের অসাধু কারবারিরা। আর অসাধু কারবারিরা ক্রেতাদের কাছে সেই ইলিশ বিক্রি করছে দ্বিগুণ দামে।