Rivers

নদীর ভাঙন ঠেকাতে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের বাঁধ

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের প্যোলাকান্দি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন দেখা দেয়। এবার ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছেন। এক সপ্তাহ ধরে নিজেদের অর্থে ও স্বেচ্ছাশ্রমে এই কাজ করছেন তাঁরা।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, ১৯৭৪ সালে এলাকাটি প্রথম ভাঙনের কবলে পড়ে। ৫০ বছরের ব্যবধানে নদের ভাঙনে ইউনিয়নটির প্যোলাকান্দি নামাপাড়া, মধ্যপাড়া, পূর্বপাড়া, ফারাজীপাড়া, মাদারেরচর, মদনেরচর ও গুমেরচর গ্রামের বেশির ভাগ অংশ নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় প্রতিবছর নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। বন্যার সময় পানির তীব্র স্রোতে বহু বাড়িঘর ও বিভিন্ন ফসল প্লাবিত হয়।

বছরের পর বছর ধরে ভাঙন চললেও ভাঙন রোধে সরকারি কোনো বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেই। ফলে স্থানীয় লোকজন নিজেদের অর্থে বাঁশ কিনে স্বেচ্ছাশ্রমে পাইলিং করছেন। নদের এক কিলোমিটারজুড়ে এই ভাঙন রোধে স্থানীয় মানুষের অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাশ্রমে সাতটি বাঁশের পাইলিং বাঁধ নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি বাঁধের দৈর্ঘ্য হবে ৯০ ফুট। প্রতিটি বাঁধ নির্মাণে প্রায় ১ লাখ টাকা করে খরচ হবে। এতে তাঁদের প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ হবে।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের লোকজন বাঁশ কেটে নদের পাড়ে বাঁধের ভাঙনকবলিত স্থানে বাঁশের পাইলিং করছেন। এই কাজে যোগ দিয়েছেন তরুণ, কিশোর, যুবক ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা। তাঁদের মধ্যে কেউ পাইলিং করছেন। আবার কেউ বাঁশ কাটছেন। কেউবা আবার এক বাঁশের সঙ্গে আরেক বাঁধছেন। এভাবেই তাপপ্রবাহের মধ্যে সবাই স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন।

প্যোলাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে এসব এলাকা ভাঙনের কবলে। ভাঙনের মুখে আমার নিজের ঘরবাড়ি নয়বার স্থানান্তর করেছি। বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়াতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে শেষ সম্বল রক্ষায় নিজেরাই বাঁশের বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। যেটুকু কাজে আসে, সেইটুকুই লাভ।’

মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আনোয়ার শেখ বলেন, ‘আমরা নিজেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাঁশ ও টাকা সংগ্রহ করেছি। কেউ বাঁশ, কেউ টাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ নিজেরা শ্রম দিচ্ছেন। যাঁর যেমন সামর্থ্য, সেভাবেই সহযোগিতা করেছেন। আমি নিজে শ্রম দিয়ে বাঁধ নির্মাণ সহযোগিতা করছি।’

বাহাদুরাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাজাহান মিয়া বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ একটি নদের ভাঙন। প্রতিবছর শত শত মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভাঙন রোধে সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। যখন ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করে, সেই সময় কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে কোনো কাজ হয়নি। স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের পাইলিং করার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তিনি তাঁদের এই কাজে সহযোগিতা করবেন।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাহিদ হাসান বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে স্থানীয় মানুষের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। আশা করছেন, খুব দ্রুত এসব এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্যোলাকান্দি এলাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের যে অংশে ভাঙন রয়েছে, সেখানে ভাঙন রোধে ইতিমধ্যেই প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি প্রক্রিয়াধীন। অনুমোদন পেলেই প্রতিরক্ষামূলক কাজ শুরু হবে। তিনি আশা করছেন, আগামী বর্ষার আগেই কাজটি বাস্তবায়ন করতে পারবেন।

Scroll to Top