boat

৬৪ হাজার জেলের ৬৫ দিনের ‘বেকারত্ব’ শুরু

মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০ মে রাত ১২টা থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে সকল ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে ভোলার প্রায় ৬৩ হাজার ৯৫৪ জন জেলে কর্মহীন হয়ে পড়বে। তবে সগরে নিষেধজ্ঞা থাকলেও ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় জেলেরা মাছ শিকারে যেতে পরবেন।

নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলেদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জেলে পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়। বরাদ্দকৃত চাল দ্রুত বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জেলেরা। ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের সমুদ্রগামী জেলে মো. আনোয়ার জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে জেলে পেশায় আছেন। কিন্তু তার এখনও জেলে কার্ড হয়নি। তাই তিনি অভিযানকালে সরকারি কোনো সহায়তা পান না।

সাতজনের সংসার চালাতে এই সময় এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয় তার।
একই এলাকার সমুদ্রগামী জেলে মো. আমিনুল ইসলাম মাঝি জানান, সরকার সাগরে অভিযান দিয়েছে এটি সকল জেলে মানতে বাধ্য। তাই তারা সাগর থেকে চলে এসেছেন। কিন্তু তার অভিযোগ, এই সময় জেলেদের জন্য বরাদ্দ ৮৬ কেজি করে চাল সঠিকভাবে পান না তারা।

২৫ থেকে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোলা জেলায় সমুদ্রে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে এমন জেলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯৫৪ জন। অপরদিকে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ফিসিংবোটের সংখ্যা মোট ১০ হাজার। এর মধ্যে সরকারি নিবন্ধনকৃত চার হাজার। বাকি ছয় হাজারের নিবন্ধন নেই।

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় চিন্তিত জেলে পরিবারগুলো। এই সময়ে সরকারের আরও সহায়তা দাবি করেন তারা। দৌলতখানের পাতার খাল এলাকার সমুদ্রগামী জেলে মো. জাকির মাঝি জানান, সাগরে সরাকার নিষেধাজ্ঞা জারি করায় তারা ফিসিং বোট নিয়ে সাগর থেকে চলে এসেছেন। এখন এক প্রকার কর্মহীন দিন চলছে তাদের। ছোট বেলা থেকে জেলে পেশায় জড়িত থাকায় অন্য কোনো কাজ করতে পারছেন না। আগের জমানো টাকা দিয়ে দুই এক সপ্তাহ কোনো মতে সংসার চললেও এর পর থেকে সংসারেও অভাব অনটন শুরু হবে। তাই দ্রুত সরকারি সহায়তার চাল বিতরণের দাবি জানান তিনি।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, সাগরে ৬৫ দিনের নিষধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্স কমিটির সভা হয়েছে। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মাছঘাটগুলোতে সচেতনতা সভা ও প্রচার প্রচারণা চালানো, সমুদ্রগামী ট্রলারগুলোর কাছে বরফ বিক্রি না করতে বরফকলগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার বড় বড় ঘাটগুলোতে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করেছি। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরো জানান, এ ছাড়াও নিষেধাজ্ঞা সময়ে জেলেদের জন্য দুই কিস্তিতে ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রথম কিস্তি ইতোমধ্যে চলে এসেছে। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম কিস্তর চাল বিতরণ করা হবে। দ্বিতীয় কিস্তির চালও এক সপ্তাহের মধ্যে চলে আসবে। পহেলা জুলাই থেকে বিতরণ করা হবে। প্রথম কিস্তিতে একজন জেলে ৫৬ কেজি করে চাল পাবে এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে পাবে ৩০ কেজি করে। ৬৩ হাজার ৯৫৪ জন জেলে এ চাল পাবে।

Scroll to Top