street

মাসের পর মাস পড়ে থাকে সড়কের কাজ, ভোগান্তির শেষ নেই

ঠিকাদারদের নানা অজুহাতে দিনের পর দিন পড়ে থাকে ঢাকার বিভিন্ন সড়কের সংস্কার কাজ। এতে ভোগান্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে প্রকল্পের খরচ। প্রায় সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও যেন অসহায় হয়ে পড়েন এদের কাছে।

রাজধানীর মিরপুর ১২-এর ১৯ নম্বর রোডসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার প্রায় অধিকাংশ সড়কেই খোঁড়াখুঁড়ির চিত্র দেখা যায়। উত্তরার দক্ষিণখানেরও একই অবস্থা।

মিরপুর ১২-এর ১৯ নম্বর রোড যেন দীর্ঘদিন তলিয়ে আছে নোংরা কাদার মধ্যে। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদেও রাস্তায় জমে থাকে নোংরা পানি। রাস্তাজুড়ে সংস্কার কাজের নামে খনন করে রাখা অসংখ্য স্থান দেখে মনে হতে পারে, হয়তো কোনো নালা পার হচ্ছে মানুষ। জনপ্রতিনিধিদের অনেক আশ্বাসের পর এইসব রাস্তার কাজ শুরু হলেও, সেগুলোই যেন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় একসময়।

রাজধানীর এইসব সড়ক সংস্কারের প্রথম ধাপেই ভেঙে ফেলা রাস্তা, পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ শুরু হওয়ার অপেক্ষায় পড়ে থাকে ৭-৮ মাস ধরে। একই অবস্থা এ এলাকার আরও কয়েকটি রোডের। বর্ষা এলে কী অবস্থা হবে তা নিয়ে শঙ্কায় এলাকার সাধারণ লোকজন।

এলাকাবাসী জানান, রাস্তা যখন ভাঙা ছিল, তখন তাও অপেক্ষাকৃত ভালো ছিল। বৃষ্টি এলে নোংরা এই পানি বাসায় ঢুকতো না। এখন রাস্তা ঠিক করার নামে পুরো রাস্তা কেটে এমন অবস্থা করে রেখেছে, সামান্য বৃষ্টিতেও নোংরা কাঁদা-পানি দিয়ে হেঁটে চলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। বিশেষ করে খানা-খন্দ করে রাখার জন্য পানি জমে গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকাও থাকে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, একদিন কাজ হলেও পরে বন্ধ থাকে সপ্তাহ খানেক। ফলে বিপাকে পড়েন এলাকার সব শ্রেণিপেশার মানুষ।

মিরপুরে আরেক বাসিন্দা জানান, এইসব কাজ মাসের পর মাস কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই এভাবে পড়ে থাকে। ঠিকাদারের নেতৃত্বে একদিন শ্রমিকরা কাজ করে এলাকাবাসীকে দেখায় কাজ চলমান আছে, তারপর আবার অনেকদিন সেই কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় রয়ে যায়। এইভাবে মানুষের হাঁটা-চলার যে পরিস্থিতি থাকে, তাও নষ্ট হয়। কাজের নামে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে রেখে যায় এরা।

ভুক্তভোগী একজন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের লোকেরা বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে নাকি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। কোনো ফুলের টবে, ছাদে বা বাড়ির আশেপাশে পানি জমে থাকলে জরিমানা করেন। এই যে রাস্তার কাজ এইভাবে অসমাপ্ত রাখায় জায়গায় জায়গায় পানি জমে আছে, মশা-মাছিসহ নানান জীবাণু এইখান থেকে ছড়াচ্ছে, এর জন্য তারা জরিমানা করেন কাউকে?’

এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও যেন অসহায় ঠিকাদারের কাছে। বললেন, বারবার তাগিদ দিয়েও কাজ আদায় করতে পারছেন না তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এই কাজগুলো দেরি হওয়ার কোনো কারণই নেই। বিভিন্ন সড়কের কাজ যদি ভাগ করে দেয়া যেত, তাহলে এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। একজন ঠিকাদারই সমস্ত সংস্কার কাজের দায়িত্ব পায়। আরও অনেক কাজ করার কারণে সব কাজেই তার দেরি হয়, আর মানুষের ভোগান্তি বাড়ে।

শুধু এই এলাকা নয়, সারা রাজধানী শহরজুড়ে এমন চিত্র চোখে পড়বে অহরহ। কখনো গ্যাস লাইন, কখনো সুয়ারেজ কিংবা রাস্তার উন্নয়ন কাজের আড়ালে, একই রাস্তা বারবার কেটে শুধুই পকেট ভারী করছে এক শ্রেণীর ঠিকাদার। ফলে সরকারের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও জনগণ সার্বিকভাবে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বলেন, অধিকাংশ ঠিকাদার নিজেদের সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও অনেক কাজ নিয়ে বসে থাকে। তারপর সেইসব কাজ শেষ করতে নির্ধারিত সময়ের চাইতে অনেক বেশি সময় নেয় এবং কাজের নামে অর্থ হাসিল করতে থাকে। এদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং ভবিষ্যতে যেন সরকারি কোনো কাজ না পায়, সে তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এই ধরনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, শুধু সিটি করপোরেশনের হাতে শাস্তির বিধান থাকলে চলবে না। জনগণও যাতে তাদের নির্ধারিত অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে কর্তৃপক্ষকে যেন শাস্তির মুখোমুখি করতে পারে, সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

তদারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে না পারলে, এসব ভোগান্তি থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Scroll to Top