আমি করোনা গবেষণায় বড় কিছু পেয়ে গেছি- বলাটাই কাল হলো!

করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছিলেন পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ডা. বিং লিউ (৩৭)। করোনাভাইরাস সম্পর্কে গবেষণায় আমি বড় কিছু সম্ভবত পেয়ে গেছি বলে সম্প্রতি জানিয়েছিলেন তিনি। পুলিশের ধারণা, ওই গবেষককে তারই পরিচিত ব্যক্তি গুলি করে হত্যা করেছে।

গত শনিবার বিকেলে পেনসিলভানিয়ার রোজ টাউনশিপের ইলম কোর্টে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে একা ছিলেন তিনি। ওই সময় তার স্ত্রী বাসায় ছিলেন না। সেই ফাঁকে এক ব্যক্তি তার বাসায় ঢুকে গুলি চালাতে শুরু করেন।

বিং লিউয়ের মাথা, ঘাড় ও বুকে গুলি লেগেছে। তবে আগেই লিউ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণায় অগ্রগতির কারণে তাকে প্রাণে মেরে ফেলা হতে পারে।

শনিবার বিকেলে টাউনশিপে নিজ বাসাতেই তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এমনকি তার বাসার অদূরে আরেকজনের লাশ পাওয়া যায়।

জানা গেছে, দ্বিতীয় ব্যক্তির বয়স ৪৬ বছর। গাউ গু নামের ওই ব্যক্তি গবেষককে গুলি করে হত্যার পর নিজেই আত্মহত্যা করেছেন বলে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানিয়েছে পুলিশ।

পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটির ওষুধ বিভাগে শিক্ষকতা করতেন বিং লিউ। করোনাভাইরাস নিয়ে আশা জাগানিয়া ফল পেয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছিলেন।

তার বিভাগ থেকে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রক্রিয়া এবং এর আচরণ সম্পর্কে ফলাফলের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন বিং লিউ। তার বৈজ্ঞানিক শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তিনি যা শুরু করেছিলেন তা সম্পূর্ণ করার জন্য বিভাগের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

তবে পুলিশ বলছে, লিউ-কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এখনই এ ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য জানা না গেলেও পরবর্তী সময়ে তা উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে পুলিশ।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, গাউ গু ওই গবেষককে গুলি করে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। পেনসিলভানিয়ায় লিউ যে বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, তার অদূরে গাড়ির মধ্যে ঢুকে আত্মহত্যা করেছেন গাউ গু।

পুলিশ জানতে পেরেছে, গাউ গু এবং ডা. বিং লিউ পরিচিত ছিলেন। তবে ঠিক কী কারণে লিউকে হত্যার পর তিনি আত্মহত্যা করলেন, তা এখনো জানা যায়নি। এমনকি লিউয়ের সঙ্গে তিনি কিভাবে পরিচিত, সে ব্যাপারে এখনই মুখ খুলতে চায় না পুলিশ।

লিউ-এর বাসা থেকে কোনোকিছু চুরি হয়ে যায়নি। সেখানে মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিছু নেই। জানা গেছে, চীনের এই নাগরিক ব্যাচেলর ডিগ্রি থেকে শুরু করে পিএইচডি সম্পন্ন করেন কম্পিউটার সায়েন্সে। আর সেসব করেন সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে। পিটার্সবার্গের স্বনামধন্য কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি লাভ করেন।

তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডা, বিং লিউ ছিলেন একজন অসামান্য গবেষক, যিনি তার অনেক সহকর্মীর কাছ থেকে সম্মান এবং প্রশংসা অর্জন করেছেন এবং বিজ্ঞানে অনন্য অবদান রেখেছেন।

ছয় বছর আগে তিনি কর্জীবন শুরু করেন। গবেষণা চালিয়ে নিজেই একটি বই লেখা ছাড়াও অন্তত ৩০ টি বইয়ে তার লেখা রয়েছে। গবেষক হিসেবে তার যেমন খ্যাতি রয়েছে, শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি আইডল; সহকর্মীরা তাকে সম্মানের চোখে দেখতেন।

পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটির সিস্টেমস বায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. ইভাত বাহার বলেন, লিউ করোনাভাইরাস নিয়ে সম্প্রতি কাজ শুরু করেছিলেন। তবে তিনি দারুণ ফল পেতে শুরু করেছিলেন। স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে লিউয়ের সংসার। বর্তমানে তারা সবাই চীনে রয়েছে।
: ডেইলি মেইল