ক্ষুধার জ্বালায় দেহব্যবসায় নাবালিকারা!

ক্ষুধা মানুষের অন্য দশটা সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বেদনাদায়ক ও অসহনীয় সমস্যা। স্বাধীনতার ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো দারিদ্র্য আর ক্ষুধার বেড়াজাল থেকে স্বাধীন হতে পারেনি ভারত। একুশ শতকে এসেও পেটের জ্বালা মেটাতে দেশটিতে বেছে নিতে হয় দেহব্যবসা। পরিবারের হাল ধরতে নাবালক-নাবালিকাকে পাঠাতে হয় দিনমজুরিতে। আর সেখানে তারা মহাজনের যৌন লালসার শিকার হলেও চুপ করে থাকে পরিবার। কারণ, পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে, কিংবা বাড়ির অসুস্থ বাবা-মায়ের চিকিৎসা করাতে একমাত্র ভরসা ওই সামান্য রোজগার।

সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টে যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশের এরকমই এক মর্মান্তিক ছবি উঠে এসেছে। যা দেখে প্রশাসনের সাফাই, অভিযোগ এলে তো ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ জানাবে কে!

উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বুন্দেলখণ্ড এলাকা। সেই এলাকার পাথরখাদান অঞ্চলের চিত্রকূটের মর্মান্তিক ছবি সামনে এসেছে। এমনিতেই দারিদ্র্যের অন্ধকারে ডুবে চিত্রকূট অঞ্চল। মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে লকডাউন। কাজ হারিয়ে বাড়িতে বসে পরিবারের পুরুষরা। ফলে পরিবারের হাল ধরতে পথে নেমেছেন বাড়ির মেয়ে-বউরা। বাদ পড়েনি নাবালক-নাবালিকারাও।

আর এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে কিছু সুবিধাবাদীর দল। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নাবালক-নাবালিকাদের কম মজুরিতে পাথর খাদানের কাজে নিয়োগ করেছে। যেখানে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরি হওয়ার কথা, সেখানে মাত্র ১০০ টাকা মজুরি দেয় মালিকরা।

কপাল ভাল থাকলে কখনো ১৫০ টাকা দেওয়া হয়। তবে তা এমনিতে মেলেনা। খাদান মালিক বা উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের যৌন চাহিদা মেটোতে হয় তাদের। বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয় না বলছে চিত্রকূটের নাবালিকারা। কারণ, ওই টাকার উপর নির্ভর করে চলে পরিবার। ফলে মুখ বুজে মেয়ের সেই অপমান সহ্য করে নেয় বাবা-মা। প্রশাসনের কাছে খাতায়-কলমে কোনো অভিযোগও দায়ের হয় না।

করভি গ্রামের এমনই এক নাবালিকা খাদান শ্রমিকের কথায়, ‘মালিকের কাছে কাজ চাইতে গেলে শর্তসাপেক্ষে কাজ মেলে। বলা হয়, খাদানে কাজ করার পাশাপাশি দেব ব্যবসায়ও নামতে হবে। উপায় না থাকায়, তাতেই রাজি হই আমরা।’ একই অভিজ্ঞতা দাফরি গ্রামের এক নাবালিকার। তার কথায়, ‘মালিকরা তাদের আসল নাম-পরিচয় আমাদের বলে না। আমাদের আসল নামও খাদানের খাতায় লেখা হয় না। কাজে ঢোকার আগে যা মজুরি দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন, তার অর্ধেকও হাতে আসে না।’

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক শেষমণি পাণ্ডে বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ এলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’ চিত্রকূটের এএসপি আর এস পাণ্ডের কথায়, আমাদের কাছে এরকম কোনো ঘটনার খবর নেই। গ্রামের পাহারাদারদের সতর্ক থাকতে বলেছি। গ্রামে-গ্রামে ঘুরে আমারা খবর নিই। এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
: সংবাদ প্রতিদিন