যে পুলিশ বার বার জেল খাটিয়েছেন তাকেই কিডনি দান!

শত্রু যখন বন্ধু এমনটাই ফুটে উঠেছে এ ঘটনায়। অপরাধীরা সাধারণত পুলিশকে এড়িয়েই চলেন। অনেকে আবার মনে-প্রাণে হয়তো অপছন্দ, ঘৃণাও করেন। যে পুলিশ অফিসার কাউকে ধরে কারাগারে পাঠান, তারই প্রাণ বাঁচানোর মতো ভালবাসা অপরাধীর মনে জন্মানো অবাস্তব, একে ফিল্মি কাহিনি মনে হতে পারে।

তবে আপনার ধারণা বদলে যাবে যদি আমেরিকার আলাবামা স্টেটের জোসেলিন জেমসের কথা শোনেন।

বছর চল্লিশের জোসেলিন এক সময় পুলিশের খাতায় নাম তুলে ফেলেন। ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে গ্রেফতারও হয়েছিলেন ১৬ বার। আসলে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। মাদকের নেশায় তার চাকরি, গাড়ি সব চলে যায়। এমনকি চুরিও করতে শুরু করেন তিনি। ফলে পুলিশের খাতায় নাম উঠতে যেমন বেশি সময় লাগেনি তেমন ধরাও পড়েন বেশ কয়েক বার। বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই তিনি টেরেল পটার নামে এক অফিসারের হাতে গ্রেফতার হন।

এরই মাঝে এক দিন টিভিতে নিজের নাম দেখতে পান জোসেলিন। পুলিশের পক্ষ তাকে ধরতে সাহায্য করার আবেদন করে খবর সম্প্রচার হচ্ছিল। তার নাম উঠে গিয়েছিল মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালদের তালিকায়। এবার তার যেন টনক নড়ে। এত দিন যা পারেননি এবার সেই সিদ্ধান্তই নিয়ে বসেন জোসেলিন। ঠিক করেন পুলিশে হাতে ধরা দেবেন, মাদকের নেশা ছাড়ার চেষ্টা করবেন।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। পুলিশের হাতে ধরা দিয়ে প্রথমে ছ’মাস জেল খাটেন। তারপর তাকে রিহ্যাবে রাখা হয় ন’মাস। নিজের সঙ্গে প্রতিদিনের এই লড়াইয়ে এক সময় তিনি জিতে যান। মাদকের নেশা থেকে মুক্তি মেলে তার। এখন তিনি অন্যদের সাহায্য করছেন, যারা মাদকের নেশা থেকে মুক্ত হতে চান, তাদের নিয়ে কাজ করছেন জোসেলিন।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি তার জীবনের কাহিনি এক নতুন মোড় নেয়। ফেসবুকে তিনি জানতে পারেন, এক প্রাক্তন পুলিশ অফিসার কিডনির রোগে ভুগছেন। তার একটি কিডনি প্রয়োজন। এই অফিসার আর কেউ নন, তাকে বার বার গ্রেফতার করেছিলেন যিনি, সেই টেরেল পটার। ফেসবুকে টেরেলের মেয়ে পোস্টটি করেছিলেন বাবার জন্য কিডনি চেয়ে।

এবার নিজের মধ্যে আরও এক বার যুদ্ধ শুরু হয় জোসেলিনের। এক দিকে তাকে সপ্তাহে প্রায় ৭৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। আবার যার কিডনির প্রয়োজন, তিনিই বার বার তাকে গ্রেফতার করেছিলেন। এই অবস্থায় টেরেলকে কিডনি দান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু সেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেন জোসোলিন। যোগাযোগ করেন টেরেলের পরিবারের সঙ্গে, জানান তার সিদ্ধান্তের কথা।

টেরেল জানিয়েছেন, কিডনি দিতে ইচ্ছুক ১০০ জনের একটা তালিকা তৈরি করা হয়, তাতেও নাম আসবে না জোসেলিনের। কারণ জোসেলিনের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগই ছিল না। আর জোসেলিনের মতো একজন কেনই বা তাকে কিডনি দিতে যাবেন! কিন্তু ভাগ্যের অদ্ভুত পরিহাস তাদের ফের এক বার মিলিয়ে দিল।

জুলাই মাসেই একটি হাসপাতালে তাদের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয়। বর্তমানে দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
: আনন্দবাজার