বছরের শেষ দিন আজ

আজ ৩০ চৈত্র ১৪২৫। বাংলা বছরের শেষ দিন। আজকের সূর্য শেষবারের মতো অতিক্রম করছে ১৪২৫ বঙ্গাব্দের সীমানা। আজ ঋতুরাজ বসন্তেরও শেষ দিন। চারদিকে বাজছে বর্ষবিদায়ের সুর। বাংলা বছরের শেষ দিন হওয়ায় চৈত্র মাসের শেষ এ দিনটিকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। এই দিবসটি বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্ববহ একটি অধ্যায়। তাই এই দিনে বর্ণাঢ্য আয়োজনে সারাদেশে উদযাপন করা হয় চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব।

“জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক, মুছে যাক গ্লানি”–আজ বিদায়ী সূর্যের সামনে এ প্রণতি রাখছে সর্বস্তরের বাঙালি।

চৈত্রসংক্রান্তি বাংলার বিশেষ লোক উৎসব। প্রধানত সনাতনী সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক বাঙালির কাছে চৈত্রসংক্রান্তি এক বৃহত্তর লোক উৎসবে পরিণত হয়েছে। হিন্দুরা এ দিনটিকে অত্যন্ত একটি পুণ্যদিন বলে মনে করে। এছাড়া সাধারনত এই বসন্তকালে বাসন্তী দেবী ও অর্ন্নপূর্ণাদেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

হিন্দু পঞ্জিকা মতে দিনটিকে গণ্য করা হয় মহবিষুব সংক্রান্তি নামে। হিন্দুরা পিতৃপুরুষের তর্পন করে থাকে, নদীতে বা দিঘীতে পুন্যস্নান করে থাকে। নানা আচার-আনুষ্ঠান আর হালখাতার প্রস্তুতি নেওয়ার দিন আজ। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে কালের অতল গর্ভে হারিয়ে যাবে আরও একটি বছর। বাঙালি বরণ করে নেবে বাংলা নববর্ষকে।

সে সঙ্গে মূল্যায়ন করা হবে বিগত বছরের সাফল্য-ব্যর্থতা। চৈত্রসংক্রান্তি বাংলার লোক সংস্কৃতির এমন এক অনুষঙ্গ, যা সর্বজনীন উৎসবের আমেজে বর্ণিল। বছরের শেষ দিনে যেমন নানা আয়োজনে বর্ষকে বিদায় জানানো হয় তেমনি চৈত্রের শেষ দিনে বৈশাখ বন্দনায় মেতে ওঠে বাঙালি।

নব আনন্দ বাজুক প্রাণে, এই মঙ্গল কামনার মাধ্যমে বিগত বছরের গ্লানি মুছে ফেলতে আবহমান বাঙালি মেতে উঠছে চৈত্রসংক্রান্তির উৎসবে। চৈত্রসংক্রান্তির প্রধান উৎসব চড়ক। চড়ক গাজন উৎসবের একটি প্রধান অঙ্গ।

শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে এইদিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকে পূণ্যজনক বলে মনে করা হয়। বাঙালী যে দিন চৈত্রসংক্রান্তির পালন করে থাকে সেদিন অদিবাসী সম্প্রদায় পালন করে থাকে তাদের বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরন অণুষ্ঠান- বৈসাবি। আমাদের লোকজ সংস্কৃতির যা কিছু সত্য, সুন্দর, শুভ ও শুচি তা টিকে থাকুক অনন্তকাল-এই হোক চৈত্রসংক্রান্তির প্রার্থনা।