দেশের কৃষি ও কৃষকের টেকসই উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে

বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষিভিত্তিক টেকসই উন্নয়ন ও কৃষি থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জনে সমবায় হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর পন্থা। পরিবারভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণসহ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজেই সম্ভব। সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদ নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

জাতিসংঘ ঘোষিত আর্ন্তজাতিক পরিবারভিত্তিক চাষাবাদ দশক বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক ভার্চ্যুয়াল কর্মশালায় বক্তারা একথা বলেন। পরিবারভিত্তিক চাষাবাদ চর্চার শিক্ষণীয় বিষয়, দেশ ও দেশের বাইরের অভিজ্ঞতা বিনিমিয় এবং সম্ভাব্য করণীয় নিরূপণের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেশন্যাল ল্যান্ড কোয়ালিশন (আইএলসি) এর সহযোগিতায় এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ এবং এশিয়ান ফার্মারস এসোসিয়েশন ফর সাসটেইনাবল রুরাল ডেভলপমেন্ট (এএফএ), ফিলিপাইন -এর যৌথ উদ্যোগে আজ ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে এই ভার্চুয়াল জাতীয় কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব ব্যবস্থায় পরিবারভিত্তিক চাষাবাদে নিয়োজিত পরিবারগুলোই সারা বিশ্বের খাদ্য যোগান দিয়ে আসছে। তাই আগামী দিনের টেকসই খাদ্য চাহিদার যোগান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সদস্য রাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময়কালকে আন্তর্জাতিক পরিবারভিত্তিক চাষাবাদ দশক বা UN Decade of Family Farming (UNDFF) হিসেবে ঘোষণা করেছে। টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ঠ বা এজেন্ডা ২০৩০ অর্জনের অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জাতিসংঘ ঘোষিত পরিবারভিত্তিক চাষাবাদ দশক উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম/কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে বাংলাদেশে এই প্রথম এ ধরনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হলো।

এতে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. মোঃ সাখাওয়াত হোসেন শরিফ, ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) এর প্রতিনিধি ফারাজি বিনতে ফেরদৌস, সার্ক এগ্রিকালচার কাউন্সিল-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম স্পেশালিষ্ট ড. রুদ্র বাহাদুর শ্রেষ্ঠা, এশিয়ান ফারমার্স এসোসিয়েশন ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট (আফা), ফিলিপাইন এর জেনারেল সেক্রেটারী, মা এস্ট্রেলা ‘এস্থার’ পেনুনিয়া, সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উল্লেখিত বিষয়ে দেশ-বিদেশের উদ্যোগ, প্রক্রিয়া ও পর্যবেক্ষণসমূহ তুলে ধরেন। এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ফ্যামিলি ফার্মিং সম্পর্কে বাংলাদেশর প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন সংস্থার উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি।

সভায় বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী যে পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হয়, তার ৮০ শতাংশই আসে পারিবারিক কৃষি থেকে। যারা অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। এদের মধ্যে নারী কৃষকের সংখ্যাও কম নয়। পরিবারের পুরুষদের শহর এবং দেশের বাইরে শ্রমিক হিসাবে মাইগ্রেশনের কারণে প্রতিনিয়ত কৃষি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে নারীর অংশগ্রহণ ৭২.৬ শতাংশ। মূলত: এই পরিবারগুলো্ই পরিবারভিত্তিক চাষাবাদের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু কৃষিজ কর্মকাণ্ডে প্রধান কুশীলব হয়েও নারীর “কৃষক” হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নাই; নারী উন্নয়ন নীতি এবং কৃষি নীতিতেও স্পষ্ট কোন কিছু বলা হয় নাই। তাদের স্বীকৃতি ও সরবারি সুবিধার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা কম। যদিও দেশে কৃষি ও কৃষি নির্ভর কৃষকদের উন্নয়নের জন্য অনেক আইন ও নীতি রয়েছে কিন্তু তার সুযোগগুলো এই ধরনের কৃষকেরা নিতে পারছে না।

আলোচকগণ পারিবারিক কৃষির বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ও সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণের জন্য ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের সমবায় একটি কার্যকর উপায় হতে পারে বলে মত দেন। তারা বলেন, এদেশের কৃষি ও কৃষিভিত্তিক টেকসই উন্নয়ন ও কৃষি থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জনে সমবায় হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর পন্থা। পরিবারভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণসহ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজেই সম্ভব বলে মত দেন। তাদের বক্তব্যে সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদ নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবনা ও বক্তব্য আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। আলোচনায় বিদ্যমান সমবায় আইনের আমূল পরিবর্তনের দাবি তুলে ধরা হয়।

সভাপতি বক্তব্যে শামসুল হুদা বলেন, সমবায় পারিবারিক কৃষি সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারতো কিন্তু সমবায় সমিতি আইন ২০১৩ অতিরিক্ত কর্তৃত্বপরায়ণতা এবং যাদের জন্য সমবায় তাদের স্বার্থ রক্ষা না করে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের স্বার্থ রক্ষার কারণে প্রকৃত সফলতা আসছে না।

এফএও প্রতিনিধি অনিল দাস বলেন, পরিবর্তীত প্রেক্ষাপটে সমবায়ের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনা ও কর্মপন্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এক্ষেত্রে সাফল্য আসবে।

মুক্ত আলোচনায় শাহ্ এ মবিন জিন্নাহ, নির্বাহী পরিচালক, সিডিএ, দিনাজপুর থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, কৃষককে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সম্পৃক্ত করা না গেলে কৃষির সফলতা আসবে না।

এজন্য তিনি প্রকৃত কৃষকদের সম্পৃক্ত করে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে একটি শক্তিশালী কৃষক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা উপর মত দেন। হারুন-অর রশিদ, মো: হেলাল উদ্দিন, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।