বেগমগঞ্জে নারী নির্যাতনের ঘটনায় দুই দিনের রিমান্ডে দেলোয়ার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান রিমান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ‘অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের ঘটনায় সোমবার রাতে র‌্যাব-১১ এর ডিএডি শেখ আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ’

এর আগে গত সোমবার ভোরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন শিমরাইল এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকাগামী একটি পরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকার কামরাঙ্গীচর ফাঁড়ি এলাকার একটি প্লাস্টিক কারখানায় আত্মগোপনে থাকা নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রধান আসামি নূর হোসেন বাদলকে (২০) গ্রেফতার করা হয়।

পরে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘আসামিদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার বাহিনীর কয়েকজন সদস্য ভুক্তভোগী গৃহবধূর ঘরে প্রবেশ করে তাকে বিবস্ত্র করে বিভিন্নভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় শারিরীকভাবে নির্যাতন করে ঘটনার ভিডিও ধারণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে পরবর্তীতে টাকা দাবি ও অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। কিন্তু রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে গত ৪ অক্টোবর ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

র‌্যাব-১১ সিও খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘দেলোয়ার বাহিনী” উক্ত এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা এবং নানান সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত এবং ‘দেলোয়ার’ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের ভয়ে এলাকার লোকজন ভীত সন্ত্রস্ত। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে দুটি হত্যা মামলা আছে। দেলোয়ারের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি অবৈধ। এটি দিয়েই মূলত এলাকায় মানুষকে ভয় দেখাতো। ভিডিওতে যারা ছিল তারা সবাই দেলোয়ার বাহিনীর সদস্য। এরা একত্রে চলাফেরা করে বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে কু-মতলব বা শ্লীলতাহানির জন্য তারা সেখানে গিয়েছিল। তবে পরবর্তী তদন্তে বিস্তারিত বের হয়ে আসবে। ’

ওইদিন রাতে দেলোয়ারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে তার মাছের খামারে অভিযান চালিয়ে ৭টি তাজা ককটেল ও দুটি গুলি উদ্ধার করে র‌্যাব।

গত ২ সেপ্টেম্বর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে নিজ ঘরে এক নারীর স্বামীকে বেঁধে রেখে আসামিরা তাকে ধর্ষনের চেষ্টা করেন। তারা এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। গত এক মাস ধরে তারা এ ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা এ ভিডিও ছেড়ে দেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী গতকাল রাত পৌনে ১২টায় পৃথক দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দুই মামলায় নয়জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় রহমত উল্লাহ (৪১) ও আবদুর রহিম (২০) নামে দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।